Onlooker desk: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিরোধীদের তোপ আসছিলই। কিন্তু এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করল আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট। গতবার কোভিড-১৯ রোধে নিজেদের সাফল্যকে ‘ভারত নিজেই বোকার মতো নষ্ট করেছে’ এবং এই জাতীয় বিপর্যয় নিজেদের তৈরি করা বলে শনিবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সমাদৃত এই জার্নাল। মোদীর সরকার এখন ‘নিজেদের ভুল মেনে নিয়ে’ পরবর্তী কী পদক্ষেপ করে, তার উপরেই মহামারীর গতিবিধি নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে। সেখানে লেখা হয়েছে — এই সঙ্কটের সময়ে যাবতীয় সমালোচনার কণ্ঠরোধ করে খোলামেলা আলোচনার পথ রুদ্ধ করার যে প্রবণতা মোদী দেখিয়েছেন, তার ক্ষমা হয় না।
কোথায় কোথায় মোদী সরকারের গাফিলতি হয়েছে, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তা তুলে ধরেছে ল্যানসেট। তারা জানিয়েছে — এপ্রিল পর্যন্ত বেশ ক’মাস সরকারের কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্স বৈঠকেই বসেনি। এর জের কী হয়েছে, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এখন যখন সঙ্কট বাড়ছে, তখন ভারতের উচিত তার প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। সরকারকে নিজের ভুল মেনে নিয়ে দায়িত্বপূর্ণ ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব এবং বিজ্ঞানমনস্কতার মাধ্যমে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিশ্বের বড় অংশের অভিযোগ, কয়েক মাস কোভিডের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভারত এমন বার্তা দিয়েছিল যেন করোনাকে তারা জয় করে ফেলেছে। ল্যানসেটও এই মানসিকতার জন্য সরকারের নিন্দায় সরব হয়েছে। বিশেষত দ্বিতীয় ঢেউ এবং নতুন স্ট্রেন নিয়ে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকার তাতে কর্ণপাত না-করে আত্মতুষ্টি দেখানোয় প্রশ্ন তুলেছে এই জার্নাল। তারা লিখেছে — ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা সত্ত্বেও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ার আগে মার্চের গোড়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন তো বলেই দিলেন — আমরা মহামারীর শেষ পর্বে পৌঁছে গিয়েছি।
রাজ্যজগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়া যে ভাবে টিকাকরণ হয়েছে, তারও তীব্র সমালোচনা করেছে ল্যানসেট। এ পর্যন্ত ২ শতাংশেরও কম মানুষের টিকাকরণ হয়েছে দেশে। জার্নালের বক্তব্য — একটা সময়ে দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদীর সরকার মহামারী মোকাবিলার চেয়ে টুইটার থেকে সমালোচনামূলক পোস্ট সরাতে বেশি মনোযোগী।
একটি হিসাব তুলে ধরে ল্যানসেট জানিয়েছে, বর্তমান ধারা বজায় থাকলে অগস্টের মধ্যে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছবে। এবং সেটা হলে মোদী সরকার নিজেদের তৈরি এই জাতীয় বিপর্যয়ের সভাপতিত্ব করবে নিজেরাই।
শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে মারা গিয়েছেন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। সংক্রামিত ৪ লক্ষের বেশি। হাসপাতালে শয্যার অভাব, অক্সিজেন নেই, টিকার টানাটানি — সব মিলিয়ে ভারতের শোচনীয় পরিস্থিতিতে ল্যানসেটের সম্পাদকীয় আরও একবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল মোদী সরকারকে।
‘ক্ষমার অযোগ্য’, করোনার লাগামছাড়া বাড়বৃদ্ধিতে মোদী সরকারকে তুলোধোনা ল্যানসেটের

আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালে প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার