Onlooker desk: রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকে হাইতির প্রেসিডেন্ট জভেনেল ময়েসকে (৫৩) হত্যা করল একদল দুষ্কৃতী। তাঁর স্ত্রী, ফার্স্ট লেডি মার্টিন ময়েস জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। হাইতির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্লড জোসেফ একটি বিবৃতিতে বুধবার এ কথা জানিয়েছেন।
ঘটনার পরে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তুমুল গুলিযুদ্ধ শুরু হয় হাইতির নিরাপত্তা বাহিনীর। চারজন সশস্ত্র দুষ্কৃতীকে খতম করা হয়েছে। আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িতদের সকলকে হয় ধরা হবে, নয়তো নিকেশ করা হবে। পুলিশের জেনারেল ডিরেক্টর লিওন চার্লস টেলিভিশনে এ কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্টের উপরে এমন ভয়াবহ হামলাকে ‘ঘৃণ্য, বর্বরোচিত এ অমানবিক’ বলেছেন জোসেফ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভাবে এমনিতেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে হাইতি। গ্যাং ওয়ারেও দীর্ণ আমেরিকার দরিদ্রতম দেশ। তাকে আরও সঙ্কটে ফেলল এই ঘটনা।
ময়েসের মৃত্যুতে দেশে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হল। কলা রপ্তানিকারক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০১৭-য় দায়িত্ব নেন। পরে নির্বাচন আয়োজন করা যায়নি বলে ডিক্রির ভিত্তিতে গত এক বছর প্রেডিসেন্ট থেকেছেন ময়েস। হাইতি সরকারে এখন মাত্র ১০ জন নির্বাচিত অফিসার রয়েছেন। সকলেই সেনেটর।
এ সপ্তাহেই জোসেফের বদলে নতুন একজন প্রধানমন্ত্রীর নাম মনোনীত করেছিলেন ময়েস। কিন্তু তিনি এখনও শপথ নেননি। তার মধ্যে গত মাসে কোভিডে মারা গিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান। দেশে করোনার দাপাদাপি যথেষ্ট রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতিও এখনও বেছে নেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে খুন করা হল প্রেসিডেন্টকে।
লিওন চার্লস নামে ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘পালানোর সময়েই আমরা দুষ্কৃতীদের পথ আটকাই। সেই থেকে ওদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ চলছে। তবে আমরা হয় বাকিদের ধরব, না হলে খতম করব।’
পোর্ট-ও-প্রিন্সে পাহাড়ের উপরে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে হামলা চালানো হয় মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ। সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হামলায় গুরুতর জখম হন তাঁর স্ত্রী।
আমেরিকায় হাইতির রাষ্ট্রদূত বচ্চিত এডমন্ড বলেন, ‘এই দুষ্কৃতীরা মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এজেন্ট হিসাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তারপরে রাতের অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে হানা দেয় বাড়ির ভিতরে।’ এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছে ওয়াশিংটন। নিন্দা করেছে লাতিন আমেরিকান দেশগুলিও।
হাইতিতে দু’সপ্তাহের ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছে সরকার। দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। এডমন্ডের মতে, এই দুষ্কৃতীরা বিদেশি। এবং তারা রীতিমতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হত্যাকারী।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্লড জোসেফ জানিয়েছেন, তারা ইংরেজি এবং স্প্যানিশে কথা বলছিল। কিন্তু হাইতির বাসিন্দারা মূলত ফরাসি বা হাইতির ভাষা ক্রেয়ল-এ কথা বলেন।
জোসেফের আহ্বান, ‘সকলে শান্তি বজায় রাখুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই বর্বরোচিত ঘটনায় শাস্তি দেওয়া হবেই।’ সেই সঙ্গেই তিনি জানান, প্রেসিডেন্টের জখম স্ত্রীকে ফ্লোরিডায় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।’
১৯৮৬-তে দুভেলিয়ার রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকেই ভারসাম্যের খোঁজ হাইতিতে। দেশের ১১ মিলিয়ন নাগরিক এই ভারসাম্যহীনতায় বাস করেন। থেকে থেকে দেশে নানা অভ্যুত্থান হয়। বিদেশি হস্তক্ষেপও কার্যত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনার নিন্দা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছেন।
২০১৭-য় ময়েস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাধে দেশের নানা প্রান্তে। তাঁর পদত্যাগের দাবিও ওঠে। কখনও দুর্নীতি, কখনও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। পরে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কুক্ষীগত করার অভিযোগ ওঠে ময়েসের বিরুদ্ধে। কিছু গ্যাংকে তিনি মদত দিতেন বলেও কারও কারও দাবি।
মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে হত্যা হাইতির প্রেসিডেন্টকে, গুরুতর জখম স্ত্রী, আরও সঙ্কটে দেশ
