প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: বহুকাল পূর্বে ছায়াছবির একটি দৃশ্যে নিহত গোলাপের মৃত্যুর বিচার চেয়েছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। এ বার বাস্তবে প্রকাণ্ড একটি শিরিষ গাছের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন বর্ধমান শহরের একটি নামী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যা নিয়ে বর্ধমান শহরবাসীর মধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গাছপ্রেমীরাও চাইছেন পুলিশ, প্রশাসন শিরিষ গাছটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করুক।
বর্ধমান শহরের পুরোনো নামকরা স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুল। এই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের কাছেই ছিল বহু পুরোনো প্রকাণ্ড শিরিষ গাছটি। গত বছর করোনার বাড়বাড়ন্তের সময় থেকে স্কুল সে ভাবে খোলা হয়নি। এর মধ্যে সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-সহ অন্যান্যরা দেখেন, গাছটি মরে শুকিয়ে গিয়েছে। স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাল বৃহস্পতিবার দাবি করেন, হঠাৎ করে তরতাজা শিরিষ গাছটি মরে যাওয়াটা তাঁদের কাছে রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। এমন রহস্যজনক ভাবে গাছ মারে যাওয়ার বিষয়ে আগেও তিনি শুনেছেন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘গাছের প্রাণ আছে। আর গাছ অন্য জীবেরও প্রাণ বাঁচায়। কিন্তু হঠাৎ করে এতদিনের গাছটি কেন মরে গেল তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাই শিরিষ গাছটির মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তার তদন্ত হোক। সে জন্যই আমি থানায় অভিযোগ করেছি।’
মিউনিসিপ্যাল স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পালের দাবিকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘গাছ মাস্টার’ তথা গাছ বিশেষজ্ঞ অরূপ চৌধুরী। অরূপ বলেন, ‘অনেক সময়ই সরকারি জায়গায় থাকা কিছু বড় গাছ হঠাৎই মারা যায়। দেখা গিয়েছে ওইসব গাছগুলি হয়তো কারও অসুবিধার কারণ হচ্ছিল। শিরিষ গাছটির মৃত্যুর পিছনে তেমনই কোনও কারণ রয়েছে কিনা তার তদন্ত হওয়া দরকার। কারণ শিরিষ গাছটিকে কেউ যদি খুন’ করে থাকে তবে তার বিচার হওয়াও জরুরি।’

প্রধান শিক্ষকের দায়ের করা অভিযোগপত্র
আবার বাসিন্দাদের কারও কারও সন্দেহ, কাঠ কেটে নেওয়ার লোভে কেউ গাছটিকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ অনেক সময় সরকারি জায়গায় থাকা গাছের গোড়ায় গরম জল বা কেমিক্যাল ঢেলে অথবা শিকড় কেটে দিয়ে গাছ মেরে ফেলা হয়। এর জেরে গাছ শুকিয়ে এলে কাঠ কেটে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছে কি না, তা দেখা দরকার বলে মনে করছেন শহরের পরিবেশপ্রেমীরা।