হলদিয়া: ‘চিতল মাছের মুইঠ্যা, গরম ভাতে দুইটা, ভুলিয়া বাঙালি খায়, চিনা জাপানি দুইটা পুইটা’— গ্রাম বাংলার ছড়ায় চিতল থাকলেও, বাজারে এখন চিতলের দেখা মেলে ভার। এক সময় প্রায়ই জেলেদের জালে ধরা পড়ত বড় বড় চিতল মাছ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন অন্যান্য দেশীয় মাছের মতো চিতলেরও দেখা মিলছে না। হারিয়ে যেতে বসা মাছটিকে এ বার পুকুরে কার্পজাতীয় রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের সঙ্গে চাষ করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ার বামুনচক গ্রামের তরুণ মৎস্যচাষি শুভ্রজ্যোতি সাহু।
হলদিয়া ব্লকের মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বন করে চিতল চাষ করে সাফল্য এসেছে। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষিত শুভ্রজ্যোতি মাছ চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন দিশা পেয়েছেন। যা আশপাশের অনেক বেকার যুবকদের উৎসাহিত করবে।’
শুভ্রজ্যোতি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে বাবার হাত ধরে বামুনচক গ্রামে গ্রামে গড়ে তোলেন ফিশারি ফার্ম। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর নিজেই হাল ধরেন মাছ চাষে। শুরুতে অল্প জায়গায় মৎস্য খামার গড়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এতে সফল হলে বাড়তে থাকে মাছ চাষের পরিধি। চিতল ছাড়াও গুলসা ট্যাংরা, পাবদার মতো হারিয়ে যাওয়া মাছের সফল বাণিজ্যিক চাষ করছেন। হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে নিয়েছেন মাছ চাষের বিভিন্ন প্রশিক্ষন।
শুভ্রজ্যোতি বলেন, ‘দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো ফিরিয়ে আনতে আমার যেমন আগ্রহ রয়েছে তেমনি হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তরের কর্তারা দারুণ উৎসাহিত করেছেন। ব্যাঙ্ক লোন ও সরকারি সহায়তাও পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, শুরুতে ৫০০ গ্রাম ওজনের কার্পজাতীয় মাছ পুকুরে ছাড়া হয়। পরে চিতলের পোনা ছাড়ি। একই সঙ্গে মা তেলাপিয়াও ছাড়া হয়। এতে মা তেলাপিয়া যে বাচ্ছা দেয়, তা চিতলের খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে আমার পুকুরে একএকটি চিতল প্রায় আড়াই কেজি ওজনের হয়ে গিয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি চিতল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা।’
হলদিয়ার মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাজি বলেন, ‘এই অতিমারীর সময়েও আমাদের ব্লক মৎস্য আধিকারিক সুমনবাবু ভার্চুয়াল মাছ চাষের প্রশিক্ষন দিচ্ছেন, যাতে মাছ চাষের অগ্রগতি অব্যাহত থাকে। এর ফলে মাছ চাষে হলদিয়া এলাকার বেশ কিছু চাষি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’ হলদিয়ার বিডিও সঞ্জয় দাস হারিয়ে যাওয়া চিতল-সহ বিভিন্ন মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে অভিনব ভার্চুয়াল মাছ চাষের প্রশিক্ষণে সমগ্র মাছ চাষিদের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাঙালির পাতে হারিয়ে যাওয়া চিতল চাষে সাফল্য বিজনেস ম্যানেজমেন্টের কৃতী ছাত্রের
