পাড়ুই (বীরভূম): দূর থেকে কেন, কাছ থেকে দেখলেও বোঝার উপায় নেই। আস্ত বাসকেই বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন বীরভূমের (Birbhum) ধানাই গ্রামের শিল্পী উদয় দাস। তবে বাসকে বাড়ি বানিয়েছেন নাকি বাড়িকে বাস বানিয়েছেন তা নিয়ে আপনার ধন্দ কাটতে বেশ কিছুটা সময় লাগবেই। শিল্পীর তৈরি ‘বাস বাড়ি’ই (Bus house) এখন ধানাই গ্রামের প্রধান আকর্ষণ। বহু দূর-দূরান্তের মানুষও এখন দেখতে যাচ্ছেন উদয়ের বাড়ি।
ধানাই গ্রামটি বীরভূম (Birbhum) জেলার পাড়ুই অঞ্চলে। এই গ্রামেরই বাসিন্দা পেশায় মৃৎশিল্পী উদয় দাস। মাটির পাশাপাশি সিমেন্ট দিয়েও মূর্তি গড়েন। তা দিয়ে সামান্য যা আয় হয় কোনও রকমে সংসার চলে। এক চিলতে মাটির ঘরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। বড় ছেলের বিয়ে হওয়ায় পরিবারের আরএক সদস্য বেড়েছে। এর মধ্যে কেউ প্রতিমা তৈরির জন্য বায়না দিতে এলে তাঁদের বসতে দেওয়ার মতো বাড়িতে জায়গা নেই। তাই অনেক দিন ধরেই একটা বাড়ি তৈরির ইচ্ছে ছিল উদয়ের। কিন্তু পেরে উঠছিলেন না টাকার অভাবে। তবে লকডাউনের সময় বাইরের কাজকর্ম অনেক কমে যাওয়ায় তখন ঠিক করেন নিজেরাই পরিশ্রম দিয়ে একটি বাড়ি বানাবেন। নির্মাণ সামগ্রী কিনেছেন ঋণ নিয়ে।
তবে শিল্পীর বাড়ি বলে কথা। সাধারণ তো হবে না। উদয়ের মাথায় আসে, কিছু একটা করতে হবে। যেখানে তাঁর শিল্পী সত্ত্বার ছাপ থাকে। লকডাউনে বাস বন্ধ। কত মানুষের কষ্ট। সেই থেকে বাসের থিমই মাথায় আসে তাঁর। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরিবারের সকলকে নিয়ে শুরু হয় ভিত খোঁড়া। তিনি মূল কারিগর। আর স্ত্রী থেকে ছেলেরা তাঁর সহযোগী। এ ভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ‘বাস বাড়ি’ (Bus house)।
উদয়ের এই বাস বাড়ি কেমন? বাসের সামনের অংশ অর্থাৎ কেবিনটা হচ্ছে রান্না ঘর। বাকি অংশ একটা বড় ঘর। উদয় বলেন, ‘লম্বায় সাড়ে ২২ ফুট এবং চওড়ায় আট ফুট ছয় ইঞ্চি। উচ্চতা আট ফুট।’ রংও করা হয়েছে একদম বাসের (Bus house) মতোই। গায়ে লেখা বোলপুর-সিউড়ি। অর্থাৎ বোলপুর থেকে সিউড়ি রুটের বাস এটি। বাসের গায়ে রয়েছে সচেতনতার বার্তাও। লেখা হয়েছে ট্র্যাফিক আইন মেনে চলুন।
এই বাস বাড়ির (Bus house) কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তেই অনেকে দেখতে আসছেন। আর হাসি মুখে ঘর-রান্না ঘর ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন উদয়। তবে শিল্পীর আক্ষেপ, ‘ছোট থেকেই মূর্তি গড়তে ভালোবাসতাম। সেটাই করে এসেছি সারা জীবন। এখন বাড়ির কথা জেনে অনেকে দেখতে এসে প্রশংসা করছেন। কিন্তু সরকার থেকে একটা শিল্পী কার্ড পর্যন্ত পাইনি। এটাই আমার আক্ষেপ।’ তিনি জানান, স্থানীয় পুরন্দরপুরে ৪৫ ফুটের কালী মূর্তি তৈরি করেছিলেন। বোলপুরে কৃষি-শিল্প মেলায় তাঁর তৈরি মূর্তি প্রদর্শন হয়েছে। সার্টিফিকেটের পাশাপাশি প্রশংসাও জুটেছে। কিন্তু আজও শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। সরকারি ভাবে দেওয়া শিল্পী ভাতাটুকু পেলে খুবই উপকৃত হবেন তিনি।
সংসারে অভাব থাকলেও আথিথেয়তার কথা বলতে ভোলেননি শিল্পী। তাঁর কথায়, ‘জীবনে অনেক সাধ করে বাড়িটি বানিয়েছি। ভালো লাগলে দেখতে আসার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ রইল।’
Theonlooker24x7.com–র সব খবরের নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন ফেসবুক পেজ ও ফলো করুন টুইটার।