প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: স্বার্থ ছাড়া এ যুগে কেউ কোনও কাজই করতে চান না, এমনটা হামেশাই শোনা যায়। তারই মধ্যে ব্যতিক্রম পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের কালুত্তক গ্রামের দরিদ্র টোটোচালক কামালউদ্দিন। দ্বিতীয় দফার লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে গেলেও লকডাউনের প্রথম দিনটায় তিনি জনস্বার্থেই টোটো নিয়ে বের হলেন পথে। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে উপার্জনের জন্যে নয়। কামালউদ্দিন দীর্ঘ সড়কপথে পড়ে থাকা কাদা এদিন নিজের হাতে করে তুলে টোটোয় চাপিয়ে নিতে নিতে এগিয়ে চলেন। পরে সেই কাদা তিনি ফেলে দেন রাস্তার পাশে জমিতে। এ ভাবে দীর্ঘ সড়কপথ তিনি কাদা মুক্ত করেন।
রাস্তায় পড়ে থাকা কাদার কারণে কোনও পথ দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কারও প্রাণ চলে যেতে পারে। তা যাতে না হয়, তাই লকডাউনে এ ভাবে পথে নামা বলে জানান কামালউদ্দিন। এক টোটো চালকের এমন মানবিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হঠাৎ করেই সড়কপথে পড়ে থাকা কাদা সরানোর ভাবনা কেন এল? এই প্রশ্নের উত্তরে কামালউদ্দিন
এদিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভাতারের নর্জা বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান এক আইনজীবী। রাস্তার উপরে পড়ে থাকা কাদাই ছিল ওই দুর্ঘটনার কারণ। কাদায় স্লিপ কেটে যাওয়াতেই ওই দিন বাইক থেকে পড়ে গিয়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হন আইনজীবী। দুর্ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন।’ কামালউদ্দিন জানান, ওই দুর্ঘটনাই তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পরেই তিনি সংকল্প নেন প্রশাসন সড়ক পথের উপরে পড়ে থাকা কাদা সরানোর ব্যবস্থা না করলে তিনিই তা করবেন। সেই সংকল্প অনুযায়ী এদিন তিনি মাঠ থেকে ট্র্যাক্টরের চাকায় উঠে এসে পাকা রাস্তায় পড়া কাদা নিজেই সরিয়ে পরিষ্কার করলেন।
কালুত্তক গ্রামের বাসিন্দা শেখ মুক্তার বলেন, ‘টোটো চালিয়ে যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়ে কামালউদ্দিনের কোনও রকমে দিন গুজরান হয়। কিন্তু কামালউদ্দিন মনের দিক থেকে বড় মানুষ। এদিন তিনি যে কাজটি করলেন তা আপাত দৃষ্টিতে ছোটখাটো বলে মনে হলেও বাস্তবে এই কাজের গুরুত্ব অনেক। সড়কপথ কাদা মুক্ত থাকলে দুর্ঘটনা থেকে অনেকেই রক্ষা পাবেন।’
দুর্ঘটনায় মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল মনকে, লকডাউনে রাস্তা পরিষ্কার টোটোচালকের

রাস্তা থেকে কাদা পরিষ্কার করছেন টোটোচালক কামালউদ্দিন