কলকাতা: নির্দিষ্ট সময়ের বেশ আগে স্থলভাগে আছড়ে পড়ল বা ল্যান্ডফল হলো অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সকাল সওয়া ন’টার বুলেটিনে বুধবার মৌসম ভবন জানিয়েছে, জানিয়েছে, ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে ইয়াস-এর স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রাজ্যে যাতে ইয়াসের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, সে জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতাতেও সতর্ক প্রশাসন। আজ, বুধবার শহরের ন’টি উড়ালপুল বন্ধ করা হয়েছে সকাল থেকে। উড়ালপুলগুলি হলো — গার্ডেনরিচ, পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, এজেসি বোস রোড, মা, তারাতলা, চিংড়িঘাটা, উল্টোডাঙ্গা এবং লকগেট। আজ সকাল সাতটা থেকে এগুলি বন্ধ। গত বছর আমফানের সময়েও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল শহরের উড়ালপুলগুলি।
ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের গতিবেগ বর্তমানে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার, সর্বোচ্চ ১৫৫ কিলোমিটার। ৩ ঘণ্টা তা থাকবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। ৬ ঘণ্টা ধরে ১৭ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। আজ দুপুরের মধ্যে ওডিশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মাঝামাঝি ওডিশার বালেশ্বরের দক্ষিণ ও ধামরার উত্তর দিক দিয়ে পেরোবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। তার পরে সে চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে। ঝড় মোকাবিলায় মঙ্গলবার রাতভর কন্ট্রোল রুমে কাটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়ায় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ১১০ কিলোমিটার থাকার কথা বলে জানিয়েছেন তিনি। সাবধানতার কারণে উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসন অনুমতি দেওয়ার আগে কেউ যেন বাড়ি ফেরার চেষ্টা না করেন।
আজ, বুধবার সকালের সাংবাদিক বৈঠকে নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে তিনি বলেন, ‘বহু এলাকা ভেসে গিয়েছে। ১৫ লক্ষ মানুষকে আমরা সরিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। তাঁদের ত্রাণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ভরা কোটালের কারণে উপকূল এলাকাগুলিতে প্লাবন বেশি হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষকে আমার অনুরোধ, যাঁরা ত্রাণ কেন্দ্রে রয়েছেন, তাঁরা এখন বাড়ি ফেরার চেষ্টা করবেন না। প্রশাসন অনুমতি দিলে তবেই বাইরে বেরোবেন।’
গোসাবায় বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শঙ্করপুর, দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরে জল ঢুকে ভাসছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১ টি নদীবাঁধ ভেঙেছে বলেও জানান মমতা। ঝড়ের প্রভাবে কাল, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ওডিশার বালেশ্বর, ভদ্রক, কেন্দ্রাপাড়া, জগৎসিংহপুরের মতো উপকূলবর্তী বিভিন্ন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি আছে। পশ্চিবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস।