কলকাতা: সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে ভুয়ো ভ্যাকসিনের ঘটনায় ধৃতের সঙ্গে তৃণমূলের বহু নেতানেত্রীর ছবি সামনে এল। বস্তুত, কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়েই সে নানাবিধ কুকীর্তি করত বলে অভিযোগ।
দেবাঞ্জন দেব নামে ওই অভিযুক্ত কলকাতায় অন্তত তিনটি টিকাকরণ কেন্দ্রের আয়োজন করেছে। সেখান থেকে প্রায় দু’হাজার গ্রহীতাকে ভুয়ো টিকা দেওয়ার অভিযোগ।
অথচ তার অতীত ছিল অন্যরকম। দেবাঞ্জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। পরে মিউজিক অ্যালবাম তৈরির কাজে যুক্ত হয় সে। তেমনই একটি অ্যালবামের নাম ‘Boiled Childhood’ বা ‘সিদ্ধ শৈশব।’
করোনা অতিমারীর সময়ে সে মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই কিটের ব্যবসা শুরু করে। হোলসেলে এই সব সামগ্রী বিক্রি শুরু করেছিল দেবাঞ্জন। আবার, কারও প্রয়োজনে বিনামূল্যেও সে সব দিত। কিন্তু সে সব ছেড়ে ভুয়ো টিকাকরণে জড়িয়ে পড়ে সে।
আর ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের মতো নেতার সঙ্গে তার ছবি সামনে আসায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। সমস্যা হলো, ছবিগুলি নেহাত এক ঝলকের সেলফি নয়। বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে তেমন ভাবে অনেকেই ছবি তোলেন। কিন্তু এই ছবিগুলো রীতিমতো একসঙ্গে। হয় কোনও অনুষ্ঠানে না হয় এমনিই পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে। কলকাতা কর্পোরেশনের জয়েন্ট কমিশনার বলেও নিজেকে দাবি করত দেবাঞ্জন।
এ বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্য কলকাতার একটি লাইব্রেরি উদ্বোধন হয়। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন ঘোষ, তাপস রায়, ফিরহাদ হাকিমদের সঙ্গে নাম খোদাই করা রয়েছে দেবাঞ্জনেরও। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুগ্ম সচিব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিরহাদ, সুব্রতদের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে সাংসদ শান্তনু সেনকেও। আইএমএ-র তরফে শান্তনু অবশ্য জানিয়েছেন, মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়েছিল একটি সংস্থা। কিন্তু অতিমারীর সময়ে তা সত্য না ভুয়ো, সেটা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মুচিপাড়া থানায় দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন শান্তনু।
সম্প্রতি কেউ তার নামের উপরে কেউ কালি লেপে দিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সম্প্রতি সোনারপুরের বিধায়ক লাভলি মৈত্রের সঙ্গেও দেখা গিয়েছে দেবাঞ্জনকে। যদিও লাভলি জানিয়েচেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি চেনেন না। অন্য নেতাদেরও সকলে জানিয়েছেন, দেবাঞ্জনের সঙ্গে আগাম পরিচয় ছিল না তাঁদের। এখন যদি তাঁদের সঙ্গে তোলা ছবি দেবাঞ্জন বড় করে দেখায়, তা হলে কিছু বলার নেই।
কোভিশিল্ডের লেবেল সাঁটা অন্য ওষুধ দেবাঞ্জনের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি সব অ্যান্টি-বায়োটিক ইঞ্জেকশন। কিন্তু দেবাঞ্জনের কারবারের উদ্দেশ্য বা মোটিভ নিয়ে পুলিশ ধন্দে। তা ছাড়া এত টাকাই বা এল কোথা থেকে? ‘আরবান ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালাচ্ছিল দেবাঞ্জন। তার জন্য সামগ্রী কেনা, স্টাফদের বেতনের অর্থই বা এল কোথা থেকে? অভিযুক্ত একটি চাকরির প্রতারণা চক্রও চালাচ্ছিল বলে খবর। এতকিছুর খরচের উৎসও খুঁজে দেখছে পুলিশ।