কলকাতা: উচ্চ মাধ্যমিকের এ বারের সম্ভাব্য প্রথম রুমানা সুলতানা এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি শুধুই একজন কৃতী ছাত্রী, নাকি তার সঙ্গে তাঁর ধর্মপরিচয় যুক্ত করাটা নেহাতই জরুরি, এ হেন এক প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন তিনি। তাতে হাওয়া লেগেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের বক্তব্যে। কারণ মহুয়া একাধিক বার রুমানাকে ‘মুসলিম কন্যা’ বলেছেন।
এ সব নিয়ে বিতর্কের আঁচের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দীর্ঘ পোস্ট দিলেন সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasreen)। এবং তিনি রুমানাকে আলাদা করে ‘মুসলিম’ বলার পক্ষেই রায় দিলেন। ‘বোমা মারা’, ‘বহুবিবাহ’ বা ‘রাস্তা আটকে নামাজ’ পরার সঙ্গে মুসলমানদের যুক্ত করা হলে এমন একটি ইতিবাচক সংবাদে কেন বাদ থাকবে এই পরিচয়?
বস্তুত, মহুয়ার বক্তব্য নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত উঠে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বহু মানুষ বহু কিছু লিখেছেন। কিন্তু তসলিমার বক্তব্য তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই একেবারে তীক্ষ্ণ ও সরাসরি যুক্তিতে আঘাত করে লেখা।
কী লিখেছেন বিতর্কিত তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasreen)?
শুরুতেই রয়েছে সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে প্রচলিত নানা নেতিবাচক ধারণা। যেমন — মুসলিমরা নামাজ পড়ার জন্য রাস্তা ব্লক করে ট্রাফিক জ্যাম বাড়ায়, জনগণের অসুবিধে করে। মুসলিমরা আত্মঘাতী বোমা হয়ে মানুষ খুন করে। মুসলিমরা বোমাবাজি করে। … মুসলিমদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না। মুসলিমদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না।
এগুলো মেনে নেওয়া গেলে এক মেয়ের প্রশংসনীয় রেজাল্টে ‘মুসলিম’ বলতে আপত্তি কোথায়, সেই প্রশ্নই উস্কে দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasreen)। তিনি লিখেছেন — তাহলে তো মনে হচ্ছে নেগেটিভ কথার বেলায় মুসলিম শব্দটি ব্যবহার করা চলতে পারে, পজিটিভ কথার বেলায় মুসলিম শব্দটির ব্যবহার চলতে পারে না! বলতে হবে ‘রুমানা সুলতানা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।’ যেন রুমানা সুলতানা নামটা শুনে বোঝা যাবে না সে হিন্দু না মুসলিম! মুসলিম শব্দটি পজিটিভ বাক্যে ব্যবহার হোক। এতে মুসলিমরাও অনুপ্রাণিত হবে সামনে এগোতে। আর মুসলিমবিরোধীদেরও কিছুটা বোধোদয় হবে।
তাঁর পোস্টের প্রেক্ষিতে নানা রকম কমেন্ট পড়েছে। অনেকে আক্রমণও করেছেন লেখিকাকে। আবার কেউ কেউ স্বাগত জানিয়েছেন তসলিমার ভাবনাকে। তবে গোটা পোস্ট জুড়েই এক ইতিবাচকতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখিকা। পড়াশোনা থেকে ভরত নাট্যম, মাহাকাশে পাড়ি, চলচ্চিত্র পরিচালনা, শরিয়া আইনের বিরোধিতা, বোরখা-হিজাবের বিরোধিতা থেকে মুসলিম ছেলেমেদের সমানাধিকারের পক্ষে লড়াই। এমন সব স্বপ্ন বুনেছেন তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasreen)।
রুমানা নিজে সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাঁকে মুসলিম না বলে কেবল ছাত্রী বললেই বেশি খুশি হতেন। আর তসলিমা তাঁর পরিণত মনস্কতা দিয়ে যে বিশ্লেষণ করেছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
পজিটিভ ক্ষেত্রেও আসুক ‘মুসলিম’-উল্লেখ, উচ্চ মাধ্যমিক ফল ঘোষণা বিতর্কে সরব তসলিমা

ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এমনই পোস্ট করেন লেখিকা