কলকাতা: কথায় বলে — অ্যাকশনস স্পিক লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস (কথার চেয়ে বেশি জোরে কথা বলে আচরণ)।
রাজ্য বিজেপির অনেকটা তেমন অবস্থা বলে কটাক্ষ করছেন অনেকে। একে তো পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লম্ফঝম্পের যা ফল হয়েছে, তাতে খুব কিছু বলার অবস্থায় তারা এমনিতেই নেই। তার উপরে ভোটের ঠিক মুখে ঢাকঢোল পিটিয়ে, ব্যক্তিগত উড়ান পাঠিয়ে যাঁদের দলে নেওয়া হয়েছিল, নাকানিচোবানি খাওয়ার পর তাঁরা বেসুর ধরে তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন বলে জল্পনা। এমনকী, চার বছর আগে দল বদল করা, বিজেপিতে জাতীয় স্তরে পদ পাওয়া এবং জিতে বিধায়ক হওয়া মুকুল রায় সম্প্রতি সপুত্র ফিরেছেন তৃণমূলে।
এই পরিস্থিতিতে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার হুমকি দিলেন বিধানসভায় বিরোদী দলনেতা, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে বিধায়ক হওয়া শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘মুকুল রায়কে দিয়ে যা শুরু হলো, তা দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে হয়নি। বিরোধী দলনেতা হিসাবে বাংলায় এই আইন কার্যকর করেই ছাড়ব।’
গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরীয় পরিয়ে তৃণমূলে স্বাগত জানান মুকুলকে।
A faithful English translation of a tweet from a devout BJP supporter. I have added or subtracted nothing.
“Auntie (Buaji) Mamata,please take this stupid cat into Trinamool. He may be heartbroken missing his friend! They used to remain closeted together for the whole day”. https://t.co/lZF970XiaW
— Tathagata Roy (@tathagata2) June 13, 2021
কিন্তু মুকুল এখনও বিজেপি-র হয়ে জেতা কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক পদ ছাড়েননি বলে খবর। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ ছাড়ার কথা জানিয়ে লেখা চিঠিও পাননি বিজেপি নেতৃত্ব। এ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু শুভেন্দু কোনও রাখঢাক রাখেননি। । শনিবার ডেবরায় বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, রাজ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের কাজ শুরু করেছেন তিনি।
কিন্তু তিনি নিজেই তো তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন। তার বেলা? সংবাদমাধ্যমে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে বিজেপি-র সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিরোধী দলনেতা হিসাবে তাই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে রাজ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের কাজ শুরু করেছি।’ এ প্রসঙ্গে দল ভাঙানোর অভিযোগ এনে মমতাকেও বিঁধেছেন শুভেন্দু।
যদিও ভোটের আগে এ কাজটা সবচেয়ে বেশি করেছে বিজেপিই। শুভেন্দুর হাত ধরেও কম নেতানেত্রী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাননি বলে অভিযোগ। তাই এখন তাঁর এ সব কথা বলা কতদূর শোভন, সে প্রশ্নও উঠছে।
এ দিকে, মুকুল তৃণমূলে ফিরে যাওয়ায় বিজেপিতে নাকি ‘একা’ হয়ে গিয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তা নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করতে আসরে নেমে পড়েছেন তথাগত রায়। টুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর অনুরোধ, কৈলাসকেও যেন তৃণমূলে নিয়ে নেওয়া হয়। যদিও তিনি নিজে টুইটটি করেননি। বাংলার এক ‘একনিষ্ঠ বিজেপি সমর্থক’-এর একটি টুইটের আক্ষরিক ইংরেজি অনুবাদ করেছেন। সেই সমর্থকের টুইটটি রিটুইটও করেছেন।
দিবাকর দেবনাথ নামে ওই টুইটার ব্যবহারকারী মুকুল ও কৈলাসের একটি ছবি পোস্ট করে টুইট করেন। তাঁর দাবি, মুকুল এবং কৈলাস সবসময় নিজেদের মধ্যে ‘গুজ-গুজ’, ‘ফিস-ফিস’ করতেন। মুকুল তৃণমূলে যাওয়ায় কৈলাস এখন ‘হতাশ’। তাই কৈলাসকে তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। টুইটে বেশ কিছু আপত্তিকর শব্দও ব্যবহার করেছেন দিবাকর।