কলকাতা: বিজেপি যতই দেখানোর চেষ্টা করুক, দলের অন্দরে সব ঠিক আছে, ততই কি বে-আব্রু হচ্ছে বাস্তব? সোমবার আরও একবার ভেসে উঠল এই প্রশ্ন। সৌজন্যে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর রাজভবন-গমন ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ।
নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পর ভোটের ঠিক আগে ডিবগাজি খেয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানো একের পর এক নেতা বেসুর ধরেছেন। তার উপরে মুকুল রায় গত শুক্রবার তৃণমূলে ফেরার পর তা আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার দলের বিধায়কদের নিয়ে রাজভবনে যাওয়ার কর্মসূচি নেন শুভেন্দু। উদ্দেশ্যে ‘রাজ্যে ঘটে চলা নানাবিধ অনৈতিক কাজকর্ম সম্পর্কে রাজ্যপালকে অবহিত করা-সহ জরুরি বিষয় আলোচনা’। কিন্তু দেখা গেল, দলের ৭৪ জন বিধায়কের মধ্যে প্রায় দু’ডজনই যোগ দিলেন না কর্মসূচিতে। স্বাভাবিক ভাবেই এই সূত্রে ফের দল বদলের জল্পনা জোরালো ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বিধায়কদের সবাই শুভেন্দুকে তাঁদের নেতা বলে মানছেন না? কেউ কেউ এ কথাও বলছেন যে নিজেই দল বদল করে গেরুয়ি শিবিরে নাম লেখানো শুভেন্দু আবার দল বদল নিয়ে এত কথা বলেন কী ভাবে। আর তৃণমূলের একাংশের কটাক্ষ — গলদ ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টায় ফাঁকফোকর যেন আরও বেশি প্রকট হচ্ছে।
সূত্রের খবর, বহু বিধায়কই দলের কাজ-কারবারে বেশ বিরক্ত। এবং অনেকে সত্যিই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তাঁরা অচিরেই মুকুলের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কুণাল ঘোষের বাড়িতে গিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সোমবার আবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীবের দাবি ছিল, কুণালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরেছেন তিনি। আর শোভন-বৈশাখীর উপলক্ষ্য পার্থর মাতৃবিয়োগের পর দেখা করা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই উপলক্ষ্যের আড়ালের প্রকৃত লক্ষ্য নিয়ে জোর কাটাছেঁড়া চলছে।
মুকুলের দলবদল নিয়ে বিজেপির নেতারা প্রথম দিকে কিছু বলতে না চাইলেও পরে ক্রমশ সুর চড়িয়েছেন। শুভেন্দু দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কখনও বলছেন যারা দল বদল করতে চায়, তাদের তাঁরাই তাড়িয়ে দেবেন। আবার সোমবার বলেছেন, এ সব অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যাওয়াই ভালো।
এত কথা বলে তাঁরা নিজেদের বিপন্নতা ও অস্বস্তিই প্রকট করছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত। এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কোথাও কোথাও বিজেপি ছেড়ে দল বেঁধে তৃণমূলে যোগদান শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে তাই অনেকের প্রশ্ন, অনেক ঢক্কানিনাদ শেষে বিজেপি কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে না?
রাজভবনে শুভেন্দুর সঙ্গে নেই দু’ডজন বিধায়ক, পার্থর বাড়িতে শোভন-বৈশাখী
