কলকাতা: আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলছে পশ্চিমবঙ্গে। এমনই কড়া ভাষায় পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নেতৃত্বাধীন কমিটি। হাইকোর্টে এই রিপোর্ট জমা করেছে তারা। গোপনীয় এই নথি কী করে বেরিয়ে পড়ল, তা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যে ক’টা কমিশন যায়, তা নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন।
কী লেখা হয়েছে ওই রিপোর্টে? নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে কমিশনের এই রিপোর্ট। তার ছত্রে ছত্রে শাসকদল তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। যাঁরা হিংসার শিকার হয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা নেই বলেও রিপোর্টে দাবি। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে শাসকদলের কর্মীদের দ্বারা মূল বিরোধী দলের কর্মীদের উপরে হিংসার উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ নাম না করে বিজেপির উপরে হামলায় সরাসরি কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তৃণমূলকে।
এমনকী শাসকদলের একাধিক বিধায়ক থেকে মন্ত্রীকে পর্যন্ত ‘দুষ্কৃতী’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ঠিক যে ভাষায় বিজেপি আক্রমণ করে, তেমনই বক্তব্য উঠে এসেছে কমিশনের রিপোর্টে।
অথচ কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে নিষেধ করেছিল। মঙ্গলবার চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার তা জনসমক্ষে চলে আসে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা বলেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আদালতে রিপোর্ট দিল। সেই রিপোর্ট ফাঁস হয়ে গেল। এটা দুঃখের বিষয়। এর পর বিচার হবে। আদালত এ জন্য সময় দিয়েছে। তার আগেই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল কী করে?’
ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় গত ৩০ জুন প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করে কমিশন। তখন রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত তার কপির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালতের বেঞ্চ তা মানেনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন, কমিশন চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর রাজ্যকে তাদের বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘আদালতকে সম্মান জানানো উচিত। এখন শুনানি শুরু হবে। রাজ্য সরকারের একটা বক্তব্য রয়েছে। সেই বক্তব্য আমরা বলব। তার আগেই রিপোর্ট বেরিয়ে গেল!’ তাঁর সংযোজন, ‘উত্তর প্রদেশে ক’টা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আদিবাসী কমিশন, সংখ্যালঘু কমিশন, ইডি, সিআইডি পাঠানো হয়েছে? হাথরস থেকে উন্নাও কত ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। আর পশ্চিমবঙ্গের নামে বদনাম করা হচ্ছে!’
প্রসঙ্গত, এ মাসের শেষ সপ্তাহেই দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। বিধানসভা ভোটে জয়ের পর এ-ই প্রথম। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন তিনি। পাশাপাশি, বিজেপি-বিরোধী একাধিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠকের কথা আছে তাঁর। যেতে পারেন সিঙ্ঘু সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকদের কাছে।
ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কড়া রিপোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের, প্রকাশ্যে আসা নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা
