কলকাতা: নারদ মামলায় ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে দিল সিবিআই। সোমবার সকালে তাঁদের বাড়ি থেকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়ার পর সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে ঘটনার পরই মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদের চেতলার বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে সরাসরি নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যান তিনি। এবং ভিতরে ঢোকার পর তাঁকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত নিজাম প্যালেস ছেড়ে যাবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর মধ্যে একই মামলায় বর্তমান বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং মুকুল রায়কে কেন গ্রেপ্তার করা হল না, তা নিয়ে তৃণমূলের তরফে প্রশ্ন উঠেছে। সে প্রসঙ্গ অবশ্য কৌশলে এড়িয়েছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, তদন্ত যে ভাবে এগোবে, তেমনই ব্যবস্থা নেবে সিবিআই। এর মধ্যে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা একটি ভিডিয়ো বার্তায় দাবি করেন, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।
এদিন সকালে ফিরহাদের বাড়ি কার্যত ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করতে গেলে বাধা দেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। রাস্তায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। যদিও সেই ভিড় এড়িয়ে কোনও রকমে মন্ত্রীকে গাড়িতে তোলা হয়। সেই সময় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান, বিনা নোটিসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও তখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের তরফে আটক বলেই জানানো হচ্ছিল। অন্য দিকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও আরএক প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও নিজাম প্যালেসে হাজির করানো হয়। এর মধ্যে তাঁদের আইনজীবীরা সেখানে দেখা করতে যান। এদিকে শোভনের স্ত্রী তথা বেহালা পূর্বের বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়কেও সেখানে দেখা যায়। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এরই মধ্যে সেখানে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে তিনি অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বলে জানান। পরে আইনজীবী মারফৎ জানান, তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে নিজাম প্যালেস ছাড়ছেন না তিনি।
এদিকে মন্ত্রী এবং বিধায়কদের গ্রেপ্তার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত বিক্ষোভ শুরু করেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মী। কোথাও অবরোধ, কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ করে হয়েছিল নারদের স্টিং ভিডিয়ো ফুটেজ। ম্যাথু স্যামুয়েল নামে এক সাংবাদিক অপারেশনটি চালান। ৫২ ঘণ্টার ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূলের বহু সাংসদ, মন্ত্রী, নেতা এবং এক আইপিএস বেআইনি ভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি সংস্থার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। নাম জড়ায় সাংসদ মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী (দু’জনেই তখন তৃণমূলে, এখন বিজেপির বিধায়ক), সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদের। রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে ফিরহাদ, মদন, সোভন, সুব্রত, ইকবাল আহমেদদের দেখা যায় ভিডিয়োয়।
তারপরে বেশ ক’বছর কেটে গিয়েছে। নারদ ভিডিয়ো প্রকাশের পরেও দু’টি নির্বাচন জিতেছেন মমতা। এ বারও ফিরহাদ, সুব্রতরা মন্ত্রী, মদন বিধায়ক হয়েছেন। ভোটে জেতার আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও খুবই সাদামাঠা ফল করেছে বিজেপি। অনেকে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এনে যা গর্জন হয়েছে, তার তুলনায় বর্ষণ এতটাই কম যে বিষয়টা কেন্দ্রের শাসকদলের পক্ষে কার্যত মুখ পোড়ার সামিল।
শপথ নিয়ে সম্প্রতি কাজ শুরু করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। সে সবের মধ্যে গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার শপথের দিনই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জানিয়েছিলেন, নারদ মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। চার্জশিট গঠনেরও অনুমতি দেন তিনি।
‘আমাকেও গ্রেপ্তার করুন’, দাবি মমতার, তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন শুভেন্দু-মুকুলে

ফিরহাদদের গ্রেপ্তারের দিন নিজাম প্যালেসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়