কলকাতা: দুর্ঘটনার ১১ বছর পর জানা গেল ‘মৃত’ আসলে ‘মৃত’ নন। জীবিত। আপাতত তিনি সিবিআই হেফাজতে। সঙ্গে তাঁর বাবাও।
জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় অমৃতাভ চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানত রেল। তিনি আদতে জোড়াবাগানের বাসিন্দা। ডিএনএ-র নমুনা মিলিয়ে তাঁর ‘দেহ’ও তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। ক্ষতিপূরণ পায় ‘মৃতে’র পরিবার। সে বাবদ মেলে চার লক্ষ টাকা। অমৃতাভর বোনকে চাকরি দেওয়া হয় রেলে।
আর এতকিছুর পর এখন জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি জীবিত। রেলকে পুরোপুরি ধোঁকা দিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবার রাতেই অমৃতাভ ও তাঁর বাবাকে আটক করেছে সিবিআই। কিন্তু সেখানেও নানা কথা বলছেন ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, তিনি অমৃতাভ নন। বাবা অবশ্য ছেলের পরিচয় স্বীকার করে নিয়েছেন। ‘মৃত’ অমৃতাভর বোনকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করেছে রেল।
২০১০-এর ২৮ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহা ও খেমাশুলির মাঝামাঝি জায়গায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস৷ মুম্বইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস গভীর রাতে লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসা একটি মালগাড়ির সঙ্গে তার সংঘর্ষে ১৫০ যাত্রীর মৃত্যু হয়৷ এই দুর্ঘটনার পিছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে জ্ঞানেশ্বরী কার্যত রেললাইনের সঙ্গে মিশে যায়। অনেকের দেহ শনাক্ত করার অবস্থাতেও ছিল না। এঁদেরই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়৷ আর এই পদ্ধতির সুযোগ নিয়েছেন অমৃতাভরা। তিনি সে দিন জ্ঞানেশ্বরীর যাত্রী ছিলেন৷ ঘটনার পর তাঁকে মৃত বলে দাবি করে পরিবার৷
ডিএনএ মিলিয়ে একটি দেহ তুলে দেওয়া হয় অমৃতাভর পরিবারের হাতে৷ এর পর নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ, অমৃতাভর বোনের চাকরি, সবই মেলে৷
রেলের তরফে সিবিআই-কে দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারি কর্মী এবং বিমা এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়ো ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমে অমৃতাভকে রেলের কাছে মৃত বলে প্রমাণ করা হয়৷
কিন্তু সন্দেহ দেখা দেওয়ায় গত বছর থেকে রেলের ভিজিল্যান্স ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়টি ফের খতিয়ে দেখতে শুরু করে৷ নিজেদের মতো করে তদন্তে নামে তারা। বোঝা যায়, সেই দুর্ঘটনায় অমৃতাভর মৃত্যু হয়নি৷ দিব্যি জীবিত অবস্থায় রেল ও সরকারকে ঠকিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের টাকা এবং চাকরি হাতিয়ে নিয়েছে অমৃতাভর পরিবার৷ কিন্তু হঠাৎ সন্দেহের উদ্রেক কেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
কী করে এই কারচুপি হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকী রেলের আধিকারিকরাও সন্দেহের আওতা থেকে বাদ নেই। তখন দায়িত্বে থাকা রেলের কয়েক জন আধিকারিকও জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে পারেন বলে খবর। এফআইআরে অমৃতাভর বাবা-মা-বোনের নাম তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে অজ্ঞাতপরিচয়দের উল্লেখও।
‘মৃত’ কিন্তু ‘মৃত’ নন, জ্ঞানেশ্বরীর ১১ বছর বাদে ভুয়ো ক্ষতিপূরণে শুরু ধরপাকড়
