Onlooker desk: করোনার ফাঁকেই উঠে এসেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আতঙ্ক। শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া জানিয়েছেন, দেশে প্রায় ৯ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিসকে মহামারী আইনের আওতায় এনেছে কেন্দ্র। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত গুজরাটে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৮১টি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কেস পাওয়া গিয়েছে সেখানে। আহমেদাবাদ, সুরাট, রাজকোটে সরকারি হাসপাতালে বিশেষ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। কেন্দ্র পর্যাপ্ত ওষুধের আশ্বাস দিলেও গুজরাটের বিভিন্ন শহরে ইতিমধ্যেই তার আকাল দেখা দিয়েছে।
করোনা মোকাবিলার পথ-পদ্ধতি গত এক বছরে তবু কিছুটা আয়ত্তে এসেছে মানুষের। আতঙ্ক ষোলো আনা থাকলেও বিষয়টা এতদিনে খানিক পরিচিত। কিন্তু ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এক দিকে আতঙ্কের, অন্যদিকে অপরিচিতও। ফাঙ্গাল ইনফেকশন কী? আসুন, একটু জেনে নেওয়ার চেষ্টা করা যাক।
ফাঙ্গাস কী?
প্রাণী ও উদ্ভিগ জগতের বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। মাটি, গাছ, ক্ষয়িষ্ণু জৈব পদার্থ, জল, বাতাস, ভেজা স্যাঁতসেঁতে জায়গা থেকে শুরু করে প্রাণী ও উদ্ভিদেও এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। বাস্তুতন্ত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ফাঙ্গাসের। জৈব পদার্থকে ভেঙে গাছের খাদ্য তৈরিতে সাহায্য করে। বাড়িতে যে ইস্ট ব্যবহার করা হয়, তা থেকে শুরু করে মাশরুমে থাকে ফাঙ্গাস। প্রায় ১ লক্ষ ৪৪ ধরনের ফাঙ্গাসের হদিস পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন নিউরোসার্জারির প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ধনঞ্জয় আই ভাট। কয়েকটি ফাঙ্গাস মানব শরীরে সংক্রমণ না ঘটালেও কিছু ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে অসুস্থতা তৈরি করে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কয়েকটি পরিচিত ধরন —
• দাদের মতো ত্বকের ইনফেকশন
• নখের ইনফেকশন
• ত্বক ভেদ করে ভিতরে ফাঙ্গাসের প্রবেশ ও বৃদ্ধি
• সাইনাস ও ফুসফুসের ইনফেকশন
• রক্তে ফাঙ্গাস ছড়িয়ে পড়লে হজম থেকে কিডনির সমস্যাও হতে পারে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন কাদের বেশি হতে পারে?
আগেই বলা হয়েছে, ফাঙ্গাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কাজেই যাঁরা এমনিতেই কোনও না কোনও অসুস্থতার শিকার, তাঁরা এতে আক্রান্ত হতে পারেন বেশি।
• ডায়াবিটিস: রক্তে অতিরিক্ত শর্করা ফাঙ্গাসের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। তা ছাড়া ডায়াবেটিকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।
• স্টেরয়েড: অতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়
• যাঁদের শরীরে আয়রনের মাত্রা বেশি
• মানসিক চাপ, দগ্ধ ও অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ
• করোনায় আক্রান্তদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। উপরন্তু আইসিইউতে অক্সিজেন থেরাপিতে থাকলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহারের ফলে আর্দ্রতার সম্মুখীন হন রোগী। যা থেকে ফাঙ্গাস বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। সে কারণে অক্সিজেনে স্টেরাইল জলের কথা বলা হচ্ছে
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ কী?
দিল্লির এইমস-এর প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া জানাচ্ছেন, করোনামুক্ত হওয়ার পরেও যদি সর্বক্ষণ মাথাব্যথা থাকে বা মুখের কোনও অংশ ফুলে যায়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্স নিতে হবে। চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে আসা বা দাঁতের গোড়া আলগা হওয়াও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ বলে গুলেরিয়া জানান,
ধরা পড়ে কী ভাবে?
সাইনাসের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান, নাকের এন্ডোস্কপি কিংবা পিসিআর পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষাতেও সংক্রমণ ধরা যেতে পারে।
সাবধানতা
• মাস্ক ব্যবহার অত্যাবশ্যক
• নিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহার
• রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত চেক করা
• মাটি ঘাঁটাঘাঁটি করলে ভালো ভাবে হাত পরিষ্কার করা। সম্ভব হলে গ্লাভস ব্যবহার
• নিয়মিত দাঁত মাজা ও মুখের ভিতর পরিষ্কার রাখা
• করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরে ব্রাশ বদলানো দরকার
কতখানি ভয়াবহ এই অসুখ?
করোনার তুলনায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। সময়মতো ঠিকঠাক চিকিৎসা না-হলে তা ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মত।