Onlooker desk: বিদেশি সেনা সরতেই দেশটায় মাথাচাড়া দিচ্ছে তালিবান (Taliban)। যুদ্ধের জেরে পরিস্থিতি এমনই টালমাটাল যে কনসুলেট সাময়িক ভাবে বন্ধ করে কূটনীতিক, জওয়ানদের সরিয়ে এনেছে ভারত। দলে দলে লোক দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেই সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি।
বারুদের গন্ধভরা সেই আফগানিস্তানে (Afghanistan) তালিবানের সঙ্গে রীতিমতো বিতর্কসভা চালাচ্ছে তারা। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ক্লাবহাউসে (Clubhouse)। ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে রীতিমতো যুক্তি দিয়ে পাল্টা বাক্যালাপ চালাচ্ছেন আফগানিস্তানের তরুণ-তরুণীরা। প্রসঙ্গত, ক্লাবহাউস একটি অডিয়ো-নির্ভর অ্যাপ।
এঁদেরই একজন, কাবুলের বাসিন্দা বছর বাইশের সোদাবা। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, তালিবানরা নাকি বদলে গিয়েছে। আমি সেটা তাদের মুখ থেকে, তাদের স্বরে শুনতে চাইছিলাম। সত্যিই বদলেছে কি না!’
আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালিবানের হাতে গেলে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়বে মহিলাদের অধিকার। সোদাবা তা নিয়ে চিন্তিত। সে কারণেই উদ্বিগ্ন তিনি। তালিবানের কাছ থেকেই শুনতে চান তাদের কথা। জানতে চান, মহিলাদের অধিকারের প্রসঙ্গে তাদের সেই ‘কঠোর’ দৃষ্টিভঙ্গি আদৌ কতখানি পাল্টেছে।
ক্লাবহাউস অডিয়ো অ্যাপে ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল ‘রুম’-এ প্রবেশ করেন। সেখানে অন্যদের কথা শোনা যায়। ভার্চুয়ালি হাত তুলে নিজেদের বক্তব্য জানানোও যায়। প্ল্যাটফর্মটির নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বক্তব্য রেকর্ড করা বা কমেন্ট কোট করা নিষিদ্ধ। এই প্ল্যাটফর্মেই এখন ভিড় জমাচ্ছে আফগান তরুণ প্রজন্ম। তাঁদের লক্ষ্য, তালিবানকে আলোচনায় আনা।
মূলত যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলি হল — পরজন্ম নিয়ে তালিবানের দর্শন। এ ছাড়া সুখী সম্পর্ক, পার্সিয়ান কবিতা ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলগুলি তালিবান কী করে এত দ্রুত কব্জা করল, সে যুক্তিও খোঁজার চেষ্টা করেছেন অনেকে। আরও অনেকে এখনও নিজেদের বক্তব্য রাখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালিবানকে রাজনৈতিক আলোচনায় টেনে আনার ঘটনা নজর কেড়েছে বহু মানুষের। ক্লাবহাউসে সবচেয়ে বেশি শ্রোতা এই বিতর্কসভারই। কখনও কখনও তালিবান সদস্যরা চ্যাটরুম সঞ্চালনা করেন। বিতর্কের আঁচ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না। যুদ্ধ, মানবাধিকার, সমাজে মহিলাদের ভূমিকা নিয়ে দুই বিপরীত মেরুর দর্শন নিয়ে তর্কাতর্কি পৌঁছয় চরমে।
কিন্তু এরই মধ্যে কিছু আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। অনেকের ভয়, তালিবান হয়তো নিয়ম ভেঙে কারও কারও বক্তব্য রেকর্ডিং করে পরে ছড়িয়ে দিতে পারে। হানিয়া সাহেবা মালিক নামে এক ব্যবহারকারী পরে এ নিয়ে টুইটও করেন। তিনি লেখেন — তালিবান আমাকে বেপরোয়া বলে। ওদের সত্য তুলে ধরায় আমার মাইক্রোফোন অফ করে দেয়। পরে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছি, তাদের ওরা বিধর্মী আখ্যা দিচ্ছে। আমাদের মৃত্যুই প্রাপ্য বলে শাসাচ্ছে।’
তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ অবশ্য শাসানির কথা অস্বীকার করেছেন। বরং আলোচনার এই পরিসরকে স্বাগতই জানিয়েছেন তিনি। এই আলোচনাকেও স্বাগত জানাচ্ছেন বহু মানুষ। অতীতে কোনও দিন তালিবান এ ভাবে খোলাখুলি আলোচনায় অংশ নেয়নি।
নিহত চিত্র সাংবাদিক, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে বিতর্কসভায় তরুণ প্রজন্ম
