প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান: করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন চিকিৎসক, নার্সরা। সেই যুদ্ধে সে সামিল হতে পারবে না। কিন্তু পাশে তো দাঁড়ানোই যায়। এ ব্যাপারে মোটামুটি মনস্থির করে বসে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবর্ষি দে। নিজের বিজ্ঞান ভাবনা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘ইউনিভার্সাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার’ তৈরি করেছে সে। পিপিই কিটের ভিতরে যোদ্ধাদের মুখে থাকা তার তৈরি এই মাস্ক টাটকা অক্সিজেন সরবরাহ করবে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের রোগীরা তাঁর মাস্কের মাধ্যমে নেবুলাইজেশনের সহায়তাও পাবেন বলে জানিয়েছে দেবর্ষি।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে দেরি নেই বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তার আগে তরুণ বিজ্ঞানীর তৈরি অভিনব মাস্ক প্রশাসন ও চিকিৎসক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এর মূল্যও সামান্য।
দেবর্ষির বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে র প্রত্যন্ত গ্রাম বেত্রাগড়ে। সে জামালপুরের সেলিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার ছাত্র। দেবর্ষি জানিয়েছে, দু’ধরনের মাস্ক তৈরি করেছে সে। একটি চিকিৎসক-নার্সদের জন্য। অন্যটি সাধারণ মানুষের জন্য। তবে দু’টিরই প্রযুক্তি এক।
ডাক্তার ও নার্সদের জন্যে তৈরি মাস্কটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। সেটির আকার তুলনায় বড়। অন্যটি আকারে একটু ছোট। মূলত ১২ ভোল্ট ডিসি রি-চার্জেবল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, বাজার থেকে কেনা একটি ‘টিপি ৪০৫৬’ এবং একটি ‘এক্স এল ৬০০৯’ সার্কিট বোর্ড ও নিজের তৈরি অন্য একটি সার্কিট বোর্ড এই ‘ইউনিভার্সাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার’-এর ভিভাইসে রয়েছে ।
দেবর্ষির কথায়, ‘সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি ডিভাইসটিতে দু’টি এয়ার সাকার রয়েছে । আর ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহারের জন্যে তৈরি করা ডিভাইসে রয়েছে ৫ টি। প্রতিটি এয়ার সাকারে ছ’টি ০.১-০.৩ মাইক্রনের ফিল্টার। যা বাতাসকে ১০০ শতাংশ বিশুদ্ধ করে পাইপলাইনের মধ্যমে মাস্কের ভিতরে পাঠিয়ে দেয়।’ ছোট ডিভাইসে থাকা সুইচের সাহায্যে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর বড় ডিভাইসটি তার (wire) দ্বারা যুক্ত রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ছোটটির ওজন ২০২ গ্রাম আর বড়টির ৪০৫ গ্রাম।
নেবুলাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৫ এমএল-এর চেম্বারটি ‘ইনপুট’ পাইপলাইন ডিভাইসের সঙ্গে এবং চেম্বারের ‘আউটপুট’ পাইপলাইন মাস্কের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এতে শ্বাস কষ্টের উপশম হবে। ডাক্তার ও নার্সদের ডিভাইসটি তৈরিতে ৫০০ টাকা খরচ পড়েছে। অন্যটির জন্য ব্যয় ৩০০- ৩৫০ টাকা।
ওই ছাত্রের বাবা ব্রজেন দে লিলুয়ার এমসিকেবি ইনস্টিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেমিস্ট্রির অধ্যাপক। মা হীরা দে গৃহবধূ। দেবর্ষির দিদি দেবর্পিতা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে এমসিকেবি ইনস্টিটিউটেই তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ব্রজেন-হীরা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ছোট থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক কারিগরি বিষয়ে দেবর্ষির আগ্রহ। এমনকী ফেলে দেওয়া ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী থেকেও কিছু তৈরির চেষ্টা করত।’ ব্রজেন বলেন, ‘এখন স্কুল বন্ধ। বাড়িতে বসেই নিজের বিজ্ঞান ভাবনা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাছে লাগিয়ে এমন সময়োপযোগী জিনিস বানিয়েছে ছেলে। তিনি এতে গর্বিত।’ ভবিষ্যতে এমন আরও জিনিস সে তৈরি করুক, এটাই তাঁরা চান।
জামালপুর ব্লক হাসপাতালের বিএমওএইচ ঋত্বিক ঘোষের মতে, এই ডিভাইসে তাঁদের সুবিধাই হবে। বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘দেবর্ষির আবিষ্কৃত ডিভাইসটি তাঁকে চমৎকৃত করে। তিনি এ সম্বন্ধে বিএমওএইচ-কে জানান।’ সার্টিফিকেশনের জন্য বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের গোচরে এনেছেন বিএমওএইচ। সার্টিফিকেশন মিললে সরকারি ভাবে দেবর্ষির আবিষ্কৃত ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে বলেও বিডিও জানিয়েছেন।