বর্ধমান: তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে গুলি করে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হলো দলেরই দুই কর্মী।
সোমবার মঙ্গলকোটের লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অসীম দাসকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার পরই বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে পুলিশ তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার স্থানীয় কল্যাণপুরের বাসিন্দা সাবুল শেখ ও কোটালঘোষের বাসিন্দা সামু শেখকে গ্রেপ্তার করেছে। দু’জনেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ধৃত সাবুল নিজেকে লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূলের সহ-সভাপতি বলে দাবি করেছেন। পুলিশ ধৃতদের এদিন কাটোয়া মহকুমা আদালতে পেশকরে ১২ দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে। বিচারক সাত দিন পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় মোটরবাইকে সিউর গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন মঙ্গকোটের লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অসীম দাস। গ্রামের ঢোকার আগে দুষ্কৃতীরা অসীমের বাইক দাঁড় করিয়ে খুব কাছ থেকে তাঁর বুকে গুলি চালিয়ে পালায়। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসক অসীমকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর দিন মৃতের ছেলে সুনন্দ দাস অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের নামে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পর পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি দলও এলাকায় গিয়ে তদন্ত শুরু করে। খুনের ঘটনার তদন্তে বিশেষ তদন্ত কমিটি বা সিট গঠন করা হয়। এদিন কলকাতা থেকে পাঁচ সদস্যের ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নানা নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি ঘটনার পুনর্নিমাণের চেষ্টা করেন।
এদিকে ঘটনার পরই বিজেপি জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী। যদিও মৃতের পরিবারের লোকজনই সেই অভিযোগকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন । তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন। এর মধ্যে বুধবার নিহত অসীম দাসের পরিবার সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘অপরাধীরা যে দলেরই হোক, ছাড়া হবে না। পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’ এদিন দলের দুই কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ায় শেষে পর্যন্ত মৃতের পরিবার সদস্যদের দাবিই সামনে এল। যদিও আদালতে তোলার সময়ে ধৃত সাবুল শেখ সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, তাঁরা নির্দোষ। তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলকোট থানায় আটটি করে অভিযোগ রয়েছে। মাদক পাচারের ঘটনায় দীর্ঘদিন জেলে ছিল সামু শেখ। মাস খানেক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সামু গ্রামে ফেরে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা কবুল করেছে।

ঘটনাস্থলে তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা
এদিকে, সাবুল ও সামু গ্রেপ্তারের পর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, ‘সাবুল দলের কোনও পদাধিকারী নয়। সমর্থক হতে পারে। তবে সামুর সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা (কাটোয়া) সহ-সভাপতি রাণাপ্রতাপ গোস্বামী বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর থেকেই বলছিলাম তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। এখন সেটাই সামনে আসছে।’