প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: রাইস মিলের দূষণ নিয়ে চাষিদের বিক্ষভের খবর মনমতো না হওয়ায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে ডেকে পাঠিয়ে মারধরের হুমকি দেওয়া হল সাংবাদিককে। শুধু হুমকি নয়, পূর্ব বর্ধমানের গলসি-১ ব্লকের পুরসা এলাকায় কোনও খবর করতে হলে শাসকদলের নেতাদের অনুমতি নিতে হবে বলেও নিদান দেওয়া হয়েছে সাংবাদিক আজিজুর রহমানকে। এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে জেলার সাংবাদিক মহলে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য এমন ঘটনাকে বরদাস্ত করা হবে না বলেই সাফ জানিয়েছেন। দলীয়স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
গলসি থানা এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আজিজুর রহমান। সাংবাদিকতা ছাড়াও সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেন তিনি। পাশাপাশি সাহিত্য চর্চাও করেন। আজিজুরের লেখা ‘উন্নয়নের কবিতা’ নামের বইটি পাঠ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব ভালো লাগে। এ জন্য আজিজুরকে শুভেচ্ছাপত্রও পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। এহেন সাংবাদিক আজিজুর গত ৩ জুন গলসির পারাজ এলাকার একটি রাইস মিলের দূষণ নিয়ে চাষিদের বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যান। চাষিদের আন্দোলেনের জেরে ওই দিন জেলা প্রশাসনের একদল প্রতিনিধি সেখানে দূষণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন। আজিজুর সেই খবর সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন। খবরে চাষিদের বক্তব্য প্রাধান্য পাওয়ায় বিষয়টি ভালো চোখে নেননি পুরসা গ্রামের তৃণমূলের সভাপতি রিয়াজুল মণ্ডল। পরদিন তিনি ফোন করে আজিজুরকে স্থানীয় তৃণমূলের পার্টি অফিসে ডেকে পাঠান। আজিজুর পার্টি অফিসে পৌঁছলে ওই নেতা প্রশ্ন তোলেন, ঘটনাস্থলে তিনি থাকলেও কেন তাঁর বক্তব্য নেওয়া হল না? খবরে কেন শুধু চাষিদের বক্তব্য হাইলাইট করা হল? আজিজুর তাঁর খবরের সপক্ষে যুক্তি দিলেও রিয়াজুল তা মানতে চাননি। আজিজুরের অভিযোগ, এর পরেই নেতা ও তাঁর সঙ্গীরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। এমনকী মেরে ঠ্যাঙ ভেঙে দেওয়া থেকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁদের অনুমতি ছাড়া পুরসা এলাকায় কোনও খবর করা যাবে না বলেও স্পষ্ট জানানো হয়। অনুমতি ছাড়া খবর করলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে বলেও আজিজুরকে শাসান ওই নেতা।
এই ঘটনায় গলসি-১ ব্লক তৃণমূলের কোনও নেতা মুখ খুলতে চাননি। প্রতিক্রিয়ার জন্য অভিযুক্ত রিয়াজুল মণ্ডলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘যিনি ফোন করে সাংবাদিককে পার্টি অফিসে ডেকে দুর্ব্যবহার করেছেন বা হুমকি দিয়েছেন, তিনি ঠিক কাজ করেননি। এই সব ঘটনা দল বরদাস্ত করবে না। ওঁর বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খবর পছন্দ না হওয়ায় সাংবাদিককে পার্টি অফিসে ডেকে হুমকি, নিন্দা নানা মহলে
