প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি পাচার হলেও প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ তুললেন খোদ তৃণমূলেরই ব্লক কার্যকরী সভাপতি। শাসকদলের নেতার এ হেন অভিযোগ সামনে আসতেই এলাকায় শোরগোল পড়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে তাঁদের বক্তব্য, বালি পাচার রুখতে পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই মেমারি থানার পুলিশ অবৈধ বালি বোঝাই পাঁচটি গাড়ি আটক করেছে। এর আগেও একাধিক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।
আউশগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শেখ আব্দুল লালনের অভিযোগ, ‘করোনার কারণে জারি হওয়া বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রকাশ্য দিবালোকে বালি লুট চলছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সাঁতলার আজয় নদের ঘাট থেকে বালি লুট হওয়ার কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হলেও হেলদোল নেই প্রশাসনের।’ এমনকী বৈধ ইজারদারকে অন্ধকারে রেখে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে এই অবৈধ কারবার চলছে বলে তাঁর অভিযোগ। খোদ শাসকদলের নেতার এমন অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনিক মহলেও।
শেখ আব্দুল লালন নিজেও অজয় নদের বালি ঘাটের একজন ইজারদার। জেলাশাসককের কাছে লিখিত অভিযোগ তিনি জানিয়েছেন, আউশগ্রামের সাঁতলার অজয় নদে তাঁর একটি বৈধ বালিঘাট রয়েছে। করোনার কারণে জারি হওয়া সরকারি বিধিনিষেধ মেনে তিনি এখন সেই ঘাট থেকে বালি তোলা বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু একদল অসাধু ব্যক্তি প্রকাশ্য দিবালোকে সেই ঘাট থেকে বেআইনি ভাবে বালি লুট করছে। আব্দুল লালন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আগেও একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে ভীষণ ভাবে ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। সেই কারনে অবৈধ ভাবে বালি তোলার ছবি-সহ সবিস্তার ই-মেলের মাধ্যমে জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।’ অভিযোগের প্রতিলিপি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, ব্লকের বিএলআরও এবং আউশগ্রাম থানার আইসিকেও পাঠিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’

মেমারিতে বাজেয়াপ্ত হওয়া অবৈধ বালি বোঝাই লরি
অন্য দিকে, মঙ্গলবার রাতে মেমারি থানার নুদিপুর মোড়ে নাকা চেকিং চালানোর সময়ে অবৈধ বালি বোঝাই পাঁচটি লরি ধরা পড়ে। লরিগুলি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি পুলিশ চালকদের গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের নাম বাদল খান, কালীপদ মাঝি, আনমত শেখ, রাহিবুল শেখ ও গোপাল দাস। ধৃতদের মধ্যে গোপালের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার নামখানা থানার দারিতনগরে। রহিবুল নদিয়ার কালীগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। বাকিরা জেলার আউশগ্রাম থানার কল্যাণপুর, চন্দনপুর ও সুন্দরপুরের বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, বর্ধমানের দিক থেকে বালি বোঝাই লরিগুলি কলকাতার দিকে যাচ্ছিল। নুদিপুর মোড়ে নাকা চেকিংয়ের সময় সেগুলি আটকানো হয়। চালকরা বালি সংক্রান্ত বৈধ কোনও নথি দেখাতে না পারায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুধবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।