বাঁকুড়া: ভোর থেকে শুরু হয়েছিল তোড়জোড়। ট্রাঙ্কুলাইজ টিমের সঙ্গে আট পশুশল্য চিকিসক প্রস্তুত। হাতির অপারেশন করা কী যে সে ব্যাপার! বন দপ্তরের আধিকারিকরা দলবল নিয়ে পৌঁছে যান বড়জোড়ার দক্ষিণ সরাগাড়া জঙ্গলে। হাতিকে লক্ষ করে ছোড়া হয় ঘুম পাড়ানি গুলি। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় দৌড় শুরু করে সে। আশ্রয় নেয় ডাকাইসিনির জঙ্গলে। পিছু পিছু পৌঁছন বন দপ্তরের দল এবং চিকিৎসকরা। দ্বিতীয় গুলিতে নিস্তেজ হয়ে পড়লে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। এবং ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় শেষমেশ সফল হন কলকাতা থেকে আসা আট ভেটেরিনারি সার্জেন।
কী হয়েছিল হাতিটির? আদতে দলছুট এই হাতিটি বেশ আক্রমণাত্মক। তার হামলায় কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও খবর। তাই বছর দেড়েক আগে তাকে ধরতে তৎপর হয়েছিল বন দপ্তর। সেই সময় কোনও ভাবে আসানসোলে ঢুকে পড়ে হাতিটি। ঘুম পাড়ানি গুলি চালিয়ে তাকে কাবু করে সেখান থেকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেই মতো চার পায়ে লোহার শিকল বেঁধে গাড়িতে করে বান্দোয়ান নিয়ে যাওয়া হয় হাতিটিকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে পায়ে শিকল খোলার সময় ঘুমের ঘোর কেটে যেতেই শুরু হয় বিপত্তি। একটা পায়ে শিকল থাকা অবস্থাতেই দৌড় দেয় দলছুট এই দাঁতাল। তার পর লোহার ওই শিকল পায়ে চেপে বসে যায়। এবং তার উপর দিয়ে মাংস গজিয়ে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই যন্ত্রণার জেরে হাতিটির মন মেজাজও ভালো ছিল না। এই পরিস্থিতিতে সে যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ফলে অনেক দিন ধরেই হাতিটিকে খুঁজছিলেন বন কর্মীরা। পরে হাতিটির সন্ধান মিললেও অপারেশন করা যায়নি। কারণ এ ধরনের অপারেশনের জন্য অনেক চিকিৎসকের প্রয়োজন। পাশাপাশি হাতির মেজাজও ঠিক ছিল না। তাই চোখে চোখে রাখছিলেন বনকর্মীরা। শেষমেশ এদিন সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অভিযান শুরু হয়। অস্ত্রোপচারের পর হাতিটি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের ডিএফও কল্যাণ রায়। আপাতত হাতিটিকে নজরদারির মধ্যেই রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে এদিন সফল অস্ত্রোপচারের পর বন দপ্তরের পাশাপাশি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের বক্তব্য, হাতিটি জঙ্গলে অবস্থান করলেও পায়ে শিকল থাকায় তার মন মেজাজ বিগড়ে ছিল। ফলে যে কোনও সময় লোকালয় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। এখন শিকল মুক্ত হওয়ায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে বলেই তাঁদের আশা।
হাতির অপারেশন! আট চিকিৎসকের চেষ্টায় শিকলমুক্ত হল গজরাজ
