প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: মুখ্যমন্ত্রী পদে বুধবার শপথ নেওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানান, রাজ্যে হিংসার ঘটনা তিনি বরদাস্ত করবেন না। পাশাপাশি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও পুলিশকে দিয়েছেন। তার পরেও পূর্ব বর্ধমান জেলায় রাজনৈতিক হিংসার সমাপ্তি ঘটছে না। এদিনও জেলায় তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের পাশাপাশি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্ত্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় শাসকদলেরই দুই গোষ্ঠীর কোন্দলে। গন্ডগোলের মধ্যে একটি অ্যাম্বুল্যান্সকে ফেলে দেওয়া হয় হাসপাতাল সংলগ্ন জলাশয়ে। খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ
বর্ধমান মেডিক্যালের পাশেই রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠনের অফিস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন দুপুরে হঠাৎই অ্যাম্বুল্যান্স চালক সংগঠনের অফিসের সামনে তৃণমূলের কিছু লোকজন জড়ো হয়। বচসা থেকে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। শুরু হয়ে যায় অফিস ভাঙচুর। পাল্টা অপর পক্ষ একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ভাঙচুর চালিয়ে সেটি পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। শাসকদলের গোষ্ঠী বিবাদ চরমে ওঠায় হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা আব্দুল রব বলেন, ‘শেখ সাহেবের নেতৃত্বে অ্যাম্বুল্যান্স চালক সংগঠন অফিসে ভাঙচুর করা হয়। সাহেব তৃণমূল কংগ্রেস করলেও বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান দক্ষিণে দলের প্রার্থী খোকন দাসের বিরোধিতা করে। এমনকী হাসপাতাল চত্বরে থাকা সকল অ্যাম্বুলেন্স চালকরা যাতে খোকন দাসকে ভোট না দেন, সে জন্যও সে চাপ দিয়েছিল। এদিন সাহেবই হাসপাতাল চত্বরে দলবল নিয়ে এসে অশান্তি সৃষ্টি করে।’ সাহেব অবশ্য জানান, তিনি বর্ধমান শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। সেটাই আব্দুল রবের রাগের কারণ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘ফল ঘোষণার দিন দুপুরে আব্দুল রবের নেতৃত্বে আমার গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। এদিনও আমাকে হাসপাতালে চত্বরে ডুকতে বাধা দেওয়া হয়। ওরাই আমার অ্যাম্বুল্যান্সটি পুকুরের জলে ফেলে দিয়েছে।’

অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর
অন্য দিকে, এদিন মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা অঞ্চলের পিলসোয়া গ্রামে বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় দলের কয়েক জন আহত হন। তার মধ্যে প্রিয়রঞ্জন কর্মকার ওরফে বাবু নামে এক বিজেপিকর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নতুনহাটে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কলকাতায় রেফার করা হয়। একই ভাবে মঙ্গলবার রাতে কাটোয়ার করজ গ্রামে বিজেপি ও তৃণমূলে মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের পাঁচ জন জখম হয়েছেন। আবার মন্তেশ্বর থানার বন্ধুপুর মোড় এলাকায় বুধবায় বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কালনার অর্জুনা গ্রামেও রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। গন্ডগোলের খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন কালনা-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা মহম্মদ আমানত আলি। তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।