প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পূর্ব বর্ধমানের বেশকিছু এলাকা।
তার মধ্যে জেলার বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিকপাড়া ও জামালপুরের আঝাপুর পঞ্চায়েতের নবগ্রামের ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দেয়। বুধবার ওই দুই এলাকা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাধ্যমতো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন প্রশাসনের কর্তারা। এরই মধ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি সরোজমিনে খতিয়ে দেখতে আগামীকাল, বৃহস্পতিবার জেলায় আসছেন তফসিলি জাতি কমিশনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।
ভোটের ফল প্রকাশের পর মিলিকপাড়ায় ১০টি দোকান ও একটি মুড়ির কারখানা ভাঙচুর হয়। এছাড়া নবগ্রামে একই দিনে এক বিজেপিকর্মীর মা ও দুই তৃণমূল কর্মী খুন হন। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার তফসিলি জাতি কমিশনের (এন সি এস সি) কেন্দ্রীর প্রতিনিধি দল নবগ্রামে হিংসা কবলিত গ্রামে যাবেন। তাঁরা আক্রান্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। রাজ্য ও জেলা পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারাও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে থাকবেন বলে খবর। সেখানে একটি কমিউনিটি হলে বিশেষ বৈঠক হতে পারে বলেও সূত্রের খবর। মূলত ভোটের পর তফসিলি জাতি গোষ্ঠীর মানুষজনের উপরে হওয়া হিংসা খতিয়ে দেখতেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসছে বলে জানা গিয়েছে।
ভোটের ফল ঘোষণার দিন বেলকাশ অঞ্চলের মিলিকপাড়া এলাকায় প্রায় ২০০ জন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। এলাকার প্রায় ১০টি দোকান ঘর ও মুড়ি মিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ভয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে যান গ্রামের বিজেপি কর্মীরা। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী ধরমপুর ও বোধপুরের প্রায় ২০০ তৃণমূল কর্মী দফায় দফায় মিলিকপাড়া এলাকায় আক্রমণ চালায়। পরের দিন সকালেও হামলা চলে বলে অভিযোগ। সব হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন ওই সব দোকান ও মুড়ি কারখানার মালিকরা। নবগ্রামে হওয়া হিংসার ঘটনায় নিহতরাও দিন আনা দিনখাওয়া পরিবারের। নিহতদের মধ্যে একজন সংখ্যালঘু পরিবারের, বাকি দু’জন তফসিলি পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছেন ওই সমস্ত পরিবারের সদস্যরা।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন-সহ প্রশাসনের অন্য কর্তারা এদিন মিলিকপাড়ার মুড়ি কারখানার মালিকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। মুড়ি কারখানার মালিকের ছেলে অপু মল্লিক বলেন, ‘সব ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। এদিন প্রশাসনের কর্তারা এসে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেবার ব্যবস্থা করার কথা শুনিয়ে গিয়েছেন।’ বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সহদেব মল্লিক বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়েছে বলে অনুমান।’