প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান
করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে গোটা দেশ। জন সমাবেশ করে তাই ২১ শে জুলাইয়ের শহিদ দিবস পালন করছে না তৃণমূল কংগ্রেস। শহিদ স্মরণ হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। সংক্রমণ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু সংক্রমণ তো ঠেকানো গেল, ব্যবসার কী হবে! এই প্রশ্নে হতাশ পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারের ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা। কারণ প্রতি বছর এই দিনটিতে তাঁদের যথেষ্ট ভালো বিক্রি হত। করোনার জেরে এ বারও আর তা হওয়ার উপায় থাকল না।
১৯৯৩ সালে সতীর্থদের উপরে গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে ২১ জুলাই দিনটিকে শহিদ দিবস হিসাবে পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস। নেতৃত্বে অবশ্যই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে এখন তাদের জয়জয়কার। তৃতীয় বারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন রাজ্যবাসী। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বারের শহিদ দিবস হয়তো কিছু ‘স্পেশ্যাল’ হতে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু মারণ ভাইরাসের জন্য তা আর হচ্ছে না। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ২১ জুলাইয়ের শহিদ সভার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল ।
অথচ এতকাল এই দিনটাতেই দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন জেলার তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে বাসগুলি কলকাতা যেত ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে। সভা শেষে ফেরার পথে শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়ানো ছিল ‘মাস্ট’। ল্যাংচা ছাড়াও বর্ধমানের অন্য দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টি সীতাভোগ ও মিহিদানা কেনার জন্য তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা ভিড় করতেন শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলির সামনে।
তৃণমূলের সমাবেশ স্থলেরই যেন মিনি ভার্সনে পরিণত হত ল্যাংচার দোকানগুলি। ভিড় সামলাতে শক্তিগড়ের ল্যাংচা বাজার এলাকায় পুলিশ পর্যন্ত মোতায়েন রাখতে হত। নিজেদের দোকানে খদ্দের টানার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করতেন ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা। জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কর্মিবাহী বাসগুলিকে দোকানের সামনে দাঁড় করানোর জন্য আপ্যায়ন করতেন তাঁরা। কিন্তু করোনার জেরে এই নিয়ে পরপর দু’বছর সবই যেন কার্যত ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে ।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘এতকাল ২১ জুলাইয়ের একমাস আগে থেকে আমরা প্রস্তুতি নিতাম। সমস্ত উপকরণ আগে থেকে রেডি থাকত। একটা মাস কারিগর, কর্মচারী মিলিয়ে গমগম করত দোকান। আর ২১ জুলাই তো কথাই নেই। দোকানগুলির সামনে যেন মহাযজ্ঞ চলত। কিন্তু এ বার কিছুই হবে না। সবার মন খারাপ।’ আর এক ব্যবসায়ী কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার সময়ে শক্তিগড়ে গাড়ি থামিয়ে টিফিন করতেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাঁরা শক্তিগড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাওয়া দাওয়া তো করতেনই। পাশাপাশি চলত ল্যাংচা, সীতাভোগ, মিহিদানা কেনা। কিন্তু কোভিড সবকিছু ওলটপালট করে দিল।’