আসানসোল: পুলিশি হেফাজতে এক তরুণের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল বরাকর। পুলিশের মারধরেই ওই যুবক মারা গিয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। আরও কয়েকটি গাড়ি ও বাইকে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এছাড়া বরাকরের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ শুরু হয়। তবে আরমান আনসারি (২১) নামে ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ সঠিক ভাবে জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
তবে আরমান আনসারির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত এদিন হয়নি। সূত্রের খবর, এই ধরনের ঘটনায় তিন জন বিশেষজ্ঞর উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে জানান হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক। কিন্তু এদিন আসানসোল জেলা হাসপাতালে তিন জন বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। ফলে আগামীকাল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেহ ময়নাতদন্ত হবে বলে জানা গিয়েছে। এবং ময়নাতদন্তের গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখা হবে।
জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে পর পর কয়েকটি বাড়িতে চুরি হয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে বরাকর স্টেশন রোডের বাসিন্দা আরমান আনসারিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার রাত ১১টা নাগাদ নিয়ে যায় বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ। এর পর মঙ্গলবার সকাল ন’টা নাগাদ আরমানের মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানো হয়। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোষ গিয়ে পড়ে বরাকর ফাঁড়িতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছিল র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। ক্ষুব্ধ জনতা ইট ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, আরমান তাঁর বাবার সঙ্গে কাজ করেন। অথচ কয়েক মাস আগে বরাকরে ব্যাঙ্কের সামনে থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। সেই মামলায় জামিনও পান। স্থানীয়দের দাবি, চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত না থাকলে পুলিশ বার বার তাকে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করছিল। এদিন অবরোধের সময়েও অনেকের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘পুলিশ হেফাজতে আরমানকে মারা হয়েছে।’ পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ। মৃত যুবকের বাবা আব্দুল কালামের অভিযোগ, ‘সোমবার রাতে বাড়ি থেকেই ছেলেকে টানতে টানতে নিয়ে গেল পুলিশ। পুলিশ লকআপে রেখে ছেলেকে মারধর করেছে। তাতেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমি এই ঘটনার শাস্তি চাই।’ সূত্রের খবর, আরমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তাহলে তাঁকে কেন লকআপে রাখা হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই। ঘটনায় বরাকর ফাঁড়ির অফিসার ইন-চার্জ অমরনাথ দাস এবং কুলটি থানার সাব-ইনস্পেক্টর প্রশান্ত পালকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর। পাশাপাশি সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশি হেফাজতে যুবকের মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্র বরাকর
