প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান
কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও তার সঙ্গে ডিভিসির ছাড়া জলে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল দামোদর (Damodar)। তার জেরে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। আর এখন দামোদর নদে জল কমতেই ব্যাপক ভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। রোয়া ধান জমি, সবজি চাষের জমি সবই দামোদরের গর্ভে চলে যেতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অমরপুর এলাকার চাষিদের। ভাঙনের হাত থেকে কী ভাবে চাষজমি রক্ষা করবেন সে কথা ভেবেই এখন দিশেহারা তাঁরা। চাষিদের দাবি, ভাঙন রুখতে অবিলম্বে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক।
জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের বহু গ্রামই দামোদর (Damodar) লাগোয়া। এখানকার অমরপুর, শিয়ালী, মাঠ শিয়ালী, কোড়া প্রভৃতি গ্রামের সিংহভাগ বাসিন্দাই কৃষিজীবী। দামোদরের পাড় বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে তাঁদের অনেকেরই চাষজমি। এখন অমরপুর এলাকায় দামোদরের পাড় জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এলাকার প্রবীণ চাষি শেখ মোবারক বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে চলা ভারী বৃষ্টিপাত ও ডিভিসির জলাধার থেকে ছাড়া জলে দামোদর ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। এখন সেই জল কমতেই অমরপুরের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় দামোদরের পাড়জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দামোদরের ধারে আমার ৩ একর ২৭ শতক চাষ জমি ছিল। তার মধ্যে ভাঙনের জেরে গত কয়েক বছরে ১ একর জমি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। এখন ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বার কতটা জমি দামোদরের গর্ভে তলিয়ে যাবে সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি।’
এলাকার অপর চাষি সনাতন মাল, মৃত্যুন মালরা বলেন, ‘ফি বছর অমরপুর এলাকার চাষজমি দামোদরের গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। চাষিরা জমিহারা হচ্ছেন। অথচ ভাঙন আটকানোর জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। দামোদরে জল বাড়লে নেতা-মন্ত্রীরা এলাকায় এসে ছবি তুলে চলে যান। কাজের কাজ আর কিছুই হয় না। অমরপুরের চাষিরা জমিহারা হয়েই চলেছেন।’
চাষিদের আনা অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চল তৃণমূলের যুব সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অমরপুর এলাকায় যে ভাবে দামোদরের পাড় ভেঙে চাষ জমি নদী গর্ভে তা সত্যি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। এলাকায় হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। ভাঙন যে ভাবে বাড়ছে তা দেখে মনে হচ্ছে, এ সব কিছুও দামোদরের গর্ভে চলে না যায়। ১০ বছর ধরে আমরা পুরশুড়া ও চাপাডাঙার সেচ দপ্তরের ভাঙনের বিষয়ে লিখিত ভাবে জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে।’ জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন, ‘অমরপুরে নদী পাড়ের ভাঙন আমি সরজমিনে দেখে এসেছি। ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।’ একই কথা শুনিয়েছেন জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার।
Theonlooker24x7.com–র সব খবরের নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন ফেসবুক পেজ ও ফলো করুন টুইটার।