কলকাতা ও বর্ধমান: দীর্ঘ ১১ বছর বাদে জানা গিয়েছে ‘মৃত’ আসলে মৃত নন। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় রেলকে ঠকিয়ে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার অভিযোগ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অথচ রবিবার সেই অমৃতাভ চৌধুরীই দাবি করলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনই দাবি তাঁর। তারা ষড়যন্ত্র করেছে, তা পরে বলবেন বলেও জানান।
২০১০-এর অভিশপ্ত সেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের (Jnaneswari Express) যাত্রী ছিলেন অমৃতাভ। কিন্তু দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে যান। তারপরেও তাঁকে মৃত বলে দাবি করে পরিবার। ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও অমৃতাভর বোনকে চাকরি দেয় রেল (Indian Railway)। তবে গত বছর কোনও ভাবে রেলের সন্দেহ হয়, ওই ব্যক্তি জীবিত। সেই সূত্রেই তদন্ত চালিয়ে আসল খবর বের করে রেল। ঘটনাটি বর্তমানে তদন্ত করে দেখছে সিবিআই (CBI)।
তবে অমৃতাভ যে মারা যাননি, সেটা কয়েক বছর আগে জানতে পারেন তাঁর আদি বাড়ির পড়শিরা। মন্তেশ্বরের বামুনপাড়ায় অমৃতাভদের পৈতৃক বাড়ি। বছর তিনেক আগে সেখানে তাঁকে দেখে অবাক হয়ে যান বাসিন্দারা। গ্রামে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। তবে অমৃতাভরা কেউ এ নিয়ে তখন মুখ খোলেননি।
জানা গিয়েছে, অমৃতাভর ডাক নাম সাহেব। বাবা মিহির চৌধুরী কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। তাই মা, বোন ও অমৃতাভও কলকাতাতেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। ইদানীং অবশ্য মন্তেশ্বরে যাতায়াত বাড়ে সাহেবের। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরাও জানতাম যে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় অমৃতাভ মারা গিয়েছে। কিন্তু বছর তিনেক আগে গ্রামে ওকে গ্রামে দেখে সবাই চমকে যাই।’ আর একজন জানান, এ প্রসঙ্গে অমৃতাভর মা অর্চনা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি তাঁরা। বলে দেন, এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন যেন না-করা হয়।
এ দিকে, শনিবার অমৃতাভকে নিয়ে সিবিআই-তদন্তের কথা জানা যায়। তাই নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গ্রামে। অমৃতাভর এক আত্মীয় রবিবার বলেন, ‘বামুনপাড়ার পৈতৃক ভিটে সংস্কার হয়। তার পর বছর দুয়েক আগে মন্তেশ্বরে চারতলা বাড়ি তৈরি করে ওরা।’ এলাকাবাসী জানান, মন্তেশ্বরের কামারশোল মোড়ের এই বাড়িটি প্রাসাদোপম। এক একটি ঘর মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, মারা যাওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয় পরিবারটি। ডাকনামে নিজেকে সাহেব চৌধুরী বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করে। ফেসবুক অ্যাকাউন্টও সাহেব চৌধুরী নামেই খোলে। ইদানীং তাঁর হালচালই বদলে গিয়েছিল। রীতিমতো নবাবি চালে চলছিল সে।
২০১০-এর ২৮ মে ঝাড়গ্রামের কাছে সরডিহা ও খেমাশুলি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের খবর, ওই ট্রেনে (Jnaneswari Express) মুম্বই যাচ্ছিলেন অমৃতাভ। তারপরে ঠিক কী হলো, সেটা স্পষ্ট নয়।
এ দিকে, রবিবারও অমৃতাভ ও তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই তদন্তকারীরা। জোড়াবাগানের বাড়িতেও এ দিন দুপুরে অমৃতাভকে নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তখনই তিনি নিজেকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ বলে দাবি করেন। এই ঘটনায় রেলেরও কয়েক জন আধিকারিক যুক্ত বলে ইঙ্গিত দেন অমৃতাভ। ক্ষতিপূরণের ৪ লক্ষ টাকাও তিনি সুদ সমেত ফেরত দেবেন বলে জানান। চল্লিশোর্ধ্ব অমৃতাভকে অবশ্য সিবিআই (CBI) এখনও গ্রেপ্তার করেনি।
জ্ঞানেশ্বরীতে ‘মৃত’ অমৃতাভকে দেখে কয়েক বছর আগেই তাজ্জব বনেছিলেন মন্তেশ্বরের বাড়ির প্রতিবেশীরা
