বর্ধমান: পেটে লাথি মেরে এক বধূর গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে। তাদের দু’জনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম সাদ্দাম শেখ ও সামাত শেখ। বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার আমবোনা গ্রামে। ভাতার থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে দুই ভাইকে। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে দু’জনকে শুক্রবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ। ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে আগামী শুক্রবার ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম।
পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতা বধূর নাম চুমকি বেগম। গলসি থানার গোলগ্রামে তাঁর বাপের
বাড়ি। বছরচারেক আগে ভাতারের আনবোনার সাদ্দামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ছেলের বাড়ির চাহিদামতোই বিয়েতে পণ দিয়েছিল চুমকির পরিবার। কিন্তু দু’মাস পর থেকেই যৌতুকের পরিমাণ নিয়ে খোঁটা দিয়ে বধূর উপর মানসিক নির্যাতন শুরু হয় বলে অভিযোগ।
বাইক কেনার জন্য চুমকিকে বাপের বাড়ি থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য সাদ্দাম স্ত্রীকে চাপ দিতে শুরু করে বলেও খবর। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বধূর বাপের বাড়ির লোকজন জামাইকে বাইক কিনে দেন। তা ছাড়া আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও অত্যাচার বন্ধ হয়নি।
চুমকি যখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন থেকে গর্ভপাত করানোর জন্য তাঁর উপরে চাপ দেওয়া শুরু করে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা। কিন্তু চুমকি তাতে রাজি হননি। এতে অত্যাচার আরও বাড়ে। ২০১৮ সালের ৩০ অগস্ট রাতে তাঁকে মারধর করা হয়। পেটে লাথি মারা হয়। তাতে বধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাপের বাড়ির লোকজন তাঁকে বর্ধমান শহরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান।
সেখান থেকে পানাগড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চুমকিকে। সেখানে তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। দু’মাস পর শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন চুমকি। ফের তাঁর উপর নির্যাতন শুরু হয়। আরও একবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তিনি যখন দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার বিচার চেয়ে চুমকি বেগম বর্ধমান আদালতে মামলা করেন। কেস রুজু করে তদন্তের জন্য ভাতার থানার ওসিকে নির্দেশ দেন সিজেএম। পুলিশ বধূর স্বামী ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করেছে।
বারবার সতর্ক, সচেতন করা সত্ত্বেও পণপ্রথা যে সমাজের কতখানি গভীরে শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে, এই ঘটনা আরও একবার তা প্রমাণ করল।
পেটে লাথি মেরে বধূর গর্ভজাত সন্তান নষ্টের অভিযোগে ধৃত স্বামী, ভাশুর
