বর্ধমান: ‘সঙ্গীতা আমি তোমায় খুব ভালবাসি। তুমি ফিরে এসো।’— হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে ধরনায় বসলেন এক যুবক। তাও আবার স্ত্রীর নতুন শ্বশুরবাড়ির সামনে। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরে।
ধরনায় বসা ওই যুবক মঙ্গলকোটের সারঙ্গপুরের বাসিন্দা অনির্বাণ বিশ্বাস (২৭)। তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভাতারের রায়রামচন্দ্রপুর গ্রামের সঙ্গীতা ঘোষের (২২)। কিন্তু সেই সম্পর্ক বাড়ির লোকজন মেনে না নেওয়ায় বছর দুয়েক আগে পালিয়ে বিয়ে করেন তাঁরা। তার পর এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল বাধে। যদিও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন অনির্বাণ ও সঙ্গীতা। কিন্তু তিন মাস সংসার করতে না করতেই তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। অশান্তি চরমে উঠলে বাপের বাড়িতে ফিরে যান সঙ্গীতা। সঙ্গীতা স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করলে অনির্বাণও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। তার পর থেকে দু’জনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক ছিল না।
এর মধ্যে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয় সঙ্গীতার। বুধবার গুসকরা শহরের শান্তিপুরের বাসিন্দা দীপক মণ্ডল (৩২) নামে এক যুবকের সঙ্গে সঙ্গীতার বিয়ে হয়। সে খবর পৌঁছতে দেরি হয়নি অনির্বাণের কাছে। তাই স্ত্রীকে ফিরে পেতে বৃহস্পতিবার গুসকরা পৌঁছে যান তিনি। খুঁজে খুঁজে পৌঁছে যান দীপকের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে ধরনা শুরু করেন। অনির্বাণের হাতে ছিল একটি পোস্টার। যাতে লেখা, ‘সঙ্গীতা আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তুমি আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কেন অন্য জনের সাথে চলে এলে। তুমি ফিরে এসো।’

সঙ্গীতার নতুন শ্বশুরবাড়ির সামনে ধরনায় অনির্বাণ
বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকার লোকজন দীপকের বাড়িতে ভিড় করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এগিয়ে এসে অনির্বাণকে বোঝানের চেষ্টা করেন। তাঁকে বার বার চলে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু অনির্বাণ বার বারই তাঁদের জানান, সঙ্গীতাকে তিনি খুব ভালোবাসেন। তাই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরা আলোচনা করে ঠিক করেন, এ ক্ষেত্রে সঙ্গীতার মতামতই শেষ কথা। সেই মতো সকলে সঙ্গীতার মতামত জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, দীপকের সঙ্গেই তিনি ঘর করবেন। সঙ্গীতা বলেন, ‘অনির্বাণ আমার উপর অত্যাচার করেছিল। সেই অত্যাচারের জন্যই সম্পর্ক টেকেনি। এখন আমি নিজের ইচ্ছেতেই দীপককে বিয়ে করেছি। আমি দীপকের সঙ্গেই থাকতে চাই।’
সঙ্গীতার এমন অনড় মনোভাবে চিড়ে ভিজবে না বুঝতে পেরে রণে ভঙ্গ দেন অনির্বাণ। উপস্থিত প্রতিবেশীদের কথা মতো শেষমেশ ধরনা তুলে নিয়ে ফিরে যান তিনি।