প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: ‘মহামানব’ আখ্যা দিয়ে ভরা মঞ্চে অনুব্রত মণ্ডলের পা ছুঁয়ে ‘প্রণাম’ করে আশীর্বাদ নিলেন আউশগ্রাম-১ বিডিও। আর একই মঞ্চে বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বলেন, ‘ভালো বিডিও। ওঁর নাম আছে।’ রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক এ ভাবে শাসকদলের নেতার পায়ে হাত দিয়ে ‘প্রণাম’ করার ছবি সামনে আসতে নানা মহলে শোরগোল পড়েছে। যদিও বিডিও-র দাবি, অনুব্রত প্রণাম গ্রহণ করেননি।
কোভিড আক্রান্তদের জন্যে আউশগ্রামের গুসকরায় একটি সেফ হোম গড়ে উঠেছে। গুসকরা শহরের নদীপটি এলাকায় আউশগ্রাম-১ ব্লকের কিষান মান্ডির একটি ভবনে ২৫ বেডের এই সেফ হোমটি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল সেই সেফ হোমের উদ্বোধন। উদ্বোধন করেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। তিনি ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, আউশগ্রাম ১ বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন মাজি প্রমুখ। প্রসঙ্গত, অনুব্রত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পাশাপাশি আউশগ্রামে দলের পর্যবেক্ষক। ফলে আউশগ্রামেও তাঁর প্রভাব রয়েছে যথেষ্টই।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখা যায়, উপস্থিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে আউশগ্রাম ১ বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় একেবারে অনুব্রত মণ্ডলের পা ছুঁয়ে ‘প্রণাম’ করে বসেন। এরপর অতিথিদের স্বাগত জানাবার সময় বিডিও তাঁর বক্তব্যে অনুব্রতকে ‘মহামানব’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই সেফ হোম চালু করার ব্যাপারে মহামানব অনুব্রত মণ্ডল আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যেমন উদ্যোগী মানুষ, তেমনই অনুব্রতবাবুও মহামানব।’ পাল্টা সৌজন্য দেখাতে ভোলেননি অনুব্রত মণ্ডলও। তিনি বলেন, ‘বিডিও যখন সেফ হোম চালুর প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছ আসেন, তখনই রাজি হয়ে যাই। এখন কোথাও না গেলেও এখানে এসেছি। এই সেফ হোমটা গুসকরার মানুষের খুব কাজে লাগবে। এটা একটা বড় কাজ হল।’ এর পরেই বিডিও-র সুখ্যাতি করে অনুব্রত বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা আপনারা ভালো বিডিও পেয়েছেন। যে বিডিওর মাধ্যমে আপনারা এগিয়ে যাবেন।’
তবে এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর নানা মহলে চর্চা শুরু হয়। যদিও বিডিও-র তরফে পরে জানানো হয়, ‘এটা বুঝতে ভুল হচ্ছে। অনেকেই মাননীয় অথিতিকে প্রণাম করার বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। উনি শ্রদ্ধেয় অথিতি। আমি উদ্যোত হয়েছিলাম কিন্তু সম্মানীয় অথিতি কোনও প্রণাম গ্রহণ করেননি। অতএব বিষয়টি নিয়ে বলার কিছু নেই।’ এ ব্যাপারে অনুব্রতর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অন্য দিকে, এদিনই গুসকরা শহরে সাংগঠনিক সভা করেন অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে দলের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা হয়। আউশগ্রাম বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভেদানন্দ থান্দার জয়লাভ করলেও ছ’টি অঞ্চলে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দলীয় সভাপতিদের এদিন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন অনুব্রত।
মঞ্চে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের পা ছুঁয়ে ‘প্রণাম’ করলেন আউশগ্রামের বিডিও
