রাধামাধব মণ্ডল, আউশগ্রাম
আউশগ্রামের (Ausgram) অমরপুর এলাকার বিষ্ণুপুর থেকে চুরি হয়েছিল ২০০ বছরে প্রাচীন শিবলিঙ্গ ও একটি মনসার মূর্তি। দিন কয়েক আগে ভোর রাতে চুরি হয় ওই দুই মূর্তি। পরে ঘটনার তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করে পুলিশ। তার পরই শনিবার বিকেল নাগাদ মূর্তি উদ্ধার হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবলিঙ্গটি পাললিক পাথরের তৈরি। আর মনসার মূর্তিটি ধাতব। বিষ্ণপুরের ওই শিবমন্দিরের পুরোহিত স্থানীয় হেদগড়া গ্রামের দীননাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, গত ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মূর্তি চুরি হয়। শুক্রবার সকালে পুজো করতে গেলে চুরির বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে দীননাথ জানান, বর্ধমান রাজ পরিবারের চিকিৎসক ছিলেন সারদাপ্রসাদ রায়। তাঁর আদি বাসভবন ছিল আউশগ্রামের (Ausgram) বিষ্ণুপুর গ্রামে। পরবর্তীকালে বর্ধমান রাজ পরিবারের আর্থিক সহায়তায় এই মন্দির-সহ শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠিত হয় এখানে। বর্তমান সেবায়েত রায় পরিবার হলেও গ্রামের যে কোনও শুভ কাজে ওখানে পুজো দেওয়ার চল রয়েছে এখনও। একেবারে ভগ্নপ্রায় মন্দিরে কোনও দরজা ছিল না। সেই সঙ্গে অরক্ষিত অবস্থায় ছিল মন্দিরটি। বর্তমান মন্দিরের সেবাইত সুদীপ কুমার রায় কর্মসূত্রে দীর্ঘ দিন বাইরে থাকেন। এই ঘটনার পর তদন্তে নেমে পুলিশ তাঁকে খবর দেয়। এরপর সুদীপ আউশগ্রামে (Ausgram) এসে শুক্রবার ছোড়া পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে ওই রাতেই বিষ্ণুপুর বাসস্টপ থেকে আলমগীর মোল্লা (২৫) ও সুভাষ মোল্লা (৩৩) নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার ধৃতদের বর্ধমান জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তিন দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিকে হেফাজতে পেয়েই জেরা শুরু করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকেই চুরি যাওয়া মূর্তি দু’টি উদ্ধার হয়। শিব মূর্তিটি উদ্ধার হয়েছে সুভাষের গোয়ালঘর থেকে। আর মনসার মূর্তিটি উদ্ধার হয়েছে অপর একজনের বাড়ি থেকে।
তদন্তকারী অফিসার এসআই অরিত্র আচার্য বলেন, ‘সরষে কাঠি চাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল মূর্তিটি।’ অন্য দিকে, এদিন মূর্তি উদ্ধারের পাশাপাশি ওসি রণজিৎ মুখোপাধ্যায় অভিযান চালিয়ে শেখ শাহিনাওয়াজ ওরফে মুক্তা নামে একজনকে এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। যদিও ওসি জানান, মূল অভিযুক্ত ফেরার। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। মূল অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি বড়সড় মূর্তি চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত।
এদিকে পুলিশের এই সাফল্যে খুশি রায় পরিবার। সুদীপ রায় বলেন, ‘প্রাচীন এই শিবলিঙ্গ চুরি অনভিপ্রেত ছিল। দীর্ঘদিনের একটি পুরাকীর্তি চুরি খুবই বেদনাদায়ক। তবে পুলিশের এই সাফল্যে আমরা খুশি।’ স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষেত্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘সারদাপ্রসাদ রায়ের পরবর্তী প্রজন্ম অবনী রায়, দীপেন রায়, সুদীপ রায় এই শিবকে করে তোলেন সর্বজনীন। গ্রামের ঐতিহ্য ও পরম্পরা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে পুলিশ রক্ষা করেছে।’ অমরপুর তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি গোলাম মোল্লা বলেন, ‘পুলিশ অভিযোগ পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে মূর্তি উদ্ধার করেছে। আমাদের এই গ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির নজির আছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক এটাই চাইব।’
Theonlooker24x7.com–র সব খবরের নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন ফেসবুক পেজ ও ফলো করুন টুইটার।